রাষ্ট্রীয় অনুদানে শিক্ষকদের সম্মানিত করার প্রচেষ্টা হাস্যকর
মো. সাইদুল হাসান সেলিম॥
আমারা বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে, যে জাতি আধুনিক গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষায় যত বেশি অগ্রগতি লাভ করতে পেরেছে, সেই জাতি তত বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। শিক্ষা নিঃসন্দেহে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। দেশ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার পালাবদলে দেশের শিক্ষা দীক্ষায়, উন্নয়ন অগ্রগতিতে কাংখিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। যে কোন উপায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় কেটে গেছে ৪৭টি বছর। উন্নয়ন অগ্রগতি যে হয়নি এমনটা নয়, তবে সময়ের তুলনায় পৃথিবীর উন্নত দেশের সাথে সমান্তরালে পাল্লা দিয়ে খুব বেশি উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে এ দাবিও যথার্থ নয়। সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশ শিক্ষায় দীক্ষায় কাংখিত লক্ষ্য অর্জনে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দেশের প্রতি মমত্ববোধ, মানবিকতা, নৈতিকতা ও সততার অভাবে আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতি শম্ভূক গতিতেই এগুচ্ছে।
গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে সংসদ নির্বাচনের পূর্বে প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনসাধারণের উদ্দেশ্য একটি নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে থাকে। এই লিখিত নির্বাচনী ইশতেহারে, ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশের উন্নয়নে কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী কাজ করবে তার লিখিত ফিরিস্তি, দলিল বাঁ প্রতিশ্রুতি বা অংগীকার থাকে। সাধারণত ইশতেহারে দেশের গণতন্ত্রের ধারণা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমুদ্র, প্রকৃতি ও পরিবেশ, গণতন্ত্র, ক্ষমতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে শিক্ষার মানোন্নয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক নির্মূলের বিষয়গুলো জোরালো ভাবে উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় ৫ বছর অতিক্রান্তে সরকারগুলো বিগত ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে, কতটা অসমাপ্ত থাকল, জনসমক্ষে তার কোন জবাবদিহিতা থাকেনা। এমনকি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশও করে না।
আমরা হয়ত দেখব আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে একশত বছরের `ডেল্টা প্ল্যান, রূপকল্প- ২০৪১, ভিশন- ২০২১- ২০৩০ লক্ষ্যগুলো হয়তো জোরালো ভাবেই থাকবে। ইশতেহারে শিক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্বের কথা বলা হলেও, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর চরম উদাসীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাস্তবায়ন অসমাপ্ত থেকে যায়। আগামী প্রজন্মকে আধুনিক বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণে শিক্ষার দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের উপর বর্তায়। দৃশ্যপটে প্রতীয়মান হয়, শিক্ষাব্যবস্থা বেসরকারিকরণের মাধ্যমে বিগত সরকারগুলো সাধারণ মানুষের শিক্ষার মৌলিক অধিকারের দায়িত্ব হতে নিষ্কৃতি পেতেই বেশী আগ্রহী ছিল।
উন্নয়ন আর সুশাসনের প্রলেপ মেখে রাষ্ট্রীয় অনুদানে( খয়রাতি সাহায্যে) শিক্ষকদের সম্মানিত করার প্রচেষ্টা হাস্যকর। রাষ্ট্রের উচ্চাভিলাসী আমলাদের বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে পাহাড়সম বঞ্চনা বৈষম্যের শিকার বেসরকারি শিক্ষকরা। বেসরকারি শিক্ষকদের প্রদেয় উৎসবের মৌলিক হিস্যার শতকরা হারের বৈষম্য-ই বলে দেয় রাষ্ট্রযন্ত্রের বিদ্বেষী মনোভাব কতটা প্রকট। নামমাত্র বাড়ি ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির নমুনা শিক্ষকদের সঙ্গে নিষ্ঠুর রসিকতার সামিল। শিক্ষকদের সারা জীবনে নেই কোন প্রমোশন, নেই বদলীর কোন ব্যবস্থা, নেই চাকরির কোন নিশ্চয়তা। রাজনৈতিক বিবেচনায় দলীয় লোকজনের অংশগ্রহণে ম্যানেজিং কমিটির সীমাহীন দৌড়াত্বে অস্থির শিক্ষাব্যবস্থা। এমনি ভাবে শিক্ষকদের বিভিন্ন বঞ্চনা বৈষম্যে শৃঙ্খলিত রেখে, তাদের নিকট থেকে গুনগত মানের শিক্ষা লাভের প্রত্যাশাও তেমনি হাস্যকর। অনাকর্ষণীয় শিক্ষকতা পেশা, শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হতে পারছে না মেধাবীরা। শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই গুনগত মানের মেধাবী শিক্ষক। শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করতে প্রয়োজন শিক্ষকদের জন্য সতন্ত্র বেতন স্কেল নির্ধারণ ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা।
বিগত দিনে নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে, নির্বাচনী ইশতেহার পড়েও দেখে না সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ কালের বিবর্তনে বিশ্বাস আস্থা হারিয়েছে নির্বাচনী ইশতেহার। এর পেছনের কারণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অসত্য বক্তব্য এবং ঢালাওভাবে মিথ্যাচার এবং প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না করা। তাই মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন, গুনগত মানের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক, বিজ্ঞান মনস্ক, প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জাতি গঠনে মনোনিবেশ করা জরুরি।
এতদসত্ত্বেও শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নে সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে, একযোগে সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ` সংযুক্তি দেখতে চায় বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম।
সভাপতি:বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম
ঢাকা বাংলাদেশ।
সৌজন্যেঃ শিক্ষাবার্তা