চার আনা বোনাস, জাতির কারিগরদের প্রতি অসম্মান!
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আর শিক্ষক জাতি গড়ার কারিগর। এ কথা দুটি সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু বাস্তবতা হলো এমন, বেসরকারি শিক্ষক মানেই বেদরকারি শিক্ষক। বেসরকারি শিক্ষক ছাগলের তিন নাম্বার ছানা। এমন কিছু কথা শিক্ষক সমাজে প্রচলিত। বেসরকারি শিক্ষকদের সাথে যে বিমাতা সূলভ আচরন করা হয় তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেকে এ মন্তব্য করে থাকেন। সম্প্রতি ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম সত্বেও অবসর ও কল্যাণের নামে বেসরকারি শিক্ষকদের থেকে অতিরিক্ত ৪% কেটে নেয়ায় দেশের পাঁচ লক্ষাধিক বেসরকারি শিক্ষকদের হৃদয় মন দুঃখে ভারাক্রান্ত।
বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাব্বিশ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। পরে সকল বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণের হিসাবটিও জানতে চেয়েছেন। আর এতেই জাতীয়করণের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন বেসরকারি শিক্ষক সমাজ। তারা সরকারকে এটাও বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, বেসরকারি শিক্ষকদের চাকুরী জাতীয়করন করলে সরকারের বাড়তি একটা খরচও হবেনা। বরং সরকার লাভবান হবেন। এহেন অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী জাতীয়করণের আলোচনা যখন তুঙ্গে ঠিক তখনি অবসর কল্যাণের নামে শিক্ষকদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কেটে তাদের হৃদয় মন ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হয়।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারি ও বেসরকারি এ দু ‘ ধারায় প্রচলিত। সরকারি ও বেসরকারিদের নিয়ম নীতি, দায়িত্ব কর্তব্য একই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে বেসরকারিদের দায়িত্ব কর্তব্য ও জবাবদিহিতা একটু বেশীই থাকে। অথচ প্রাপ্তির বিচারে তাদের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল।
সামনে ঈদ। সরকারি শিক্ষকগণ স্কেলের শতভাগ বোনাস পাবেন। আর বেসরকারিগণ পাবেন ২৫%। জাতির কারিগরদের প্রতি এটা একটা অসম্মান। ঈদের আনন্দ সরকারিরা করবেন ১০০% আর বেসরকারিরা করবেন ২৫%। আশ্চর্য এক নিয়ম। পৃথিবীর অন্য কোথাও অদ্ভুদ এ নিয়ম আছে কিনা আমার জানা নাই। একজন সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল ১২৫০০ টাকা। সে বোনাস পাবেন ৩১২৫ টাকা। এই দূর্মূল্যের বাজারে একজন শিক্ষক সারাটা বছর সংসার চালিয়ে যখন ঈদ আসে তখন কিভাবে এ সামান্য বোনাসের টাকা দিয়ে পরিবার পরিজনদের জন্য কেনাকাটা করবেন?
সরকার শিক্ষা খাতে অনেক ব্যয় বহুল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ করছেন। নতুন নতুন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয় না। বছরে দুটি ঈদ। পূর্ণাঙ্গ বোনাস দিতে বাড়তি আর কত টাকাই বা লাগে।কর্তৃপক্ষ যদি শিক্ষকদের প্রতি সদয় হন আর দৃষ্টি ভঙ্গির একটু পরিবর্তন করেন তাহলেই সম্ভব ২৫% এর পরিবর্তে ১০০% উৎসব ভাতা প্রদান।
তাই বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখকঃ
মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন
প্রভাষক,
জিরাইল আজিজিয়া ফাজিল মাদরাসা
বাকেরগঞ্জ, বরিশাল।