বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা গতিশীল করতে বদলি প্রথা চালু অপরিহার্য
স্বাধীনতার এত বছরে ও বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় বদলি প্রথা চালু হলো না। একটি দেশের মেরুদণ্ড হলো শিক্ষা ব্যবস্থা। আর এই শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হলে দেশ পিছিয়ে যেতে বাধ্য। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা। একই দেশে দুই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা মানে দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমান সরকার যেহেতু শিক্ষা বান্ধব সরকার। সেহেতু সরকারি ন্যায় বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার গতি বাড়াতে আশা করি যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়ানোর সুযোগ করে দিবেন।
বদলি ব্যবস্থা চালু করার জন্য বেশ কয়েক বার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও বদলি ব্যবস্থার কোন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা -২০১৮ বলা হয়েছে, সরকার মনে করলে বেসরকারি শিক্ষকদের ও বদলি করতে পারবে। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির কোন সিস্টেম নেই।
বর্তমান সময়ে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে বদলি প্রথা চালু করা অতীব জরুরি। বর্তমান যুগকে বর্তমান সরকার যেহেতু ডিজিটাল যুগ ঘোষণা করেছেন। আর এই ডিজিটাল যুগে প্রাচীনতম প্রথা কোন মতেই গ্রহণ যোগ্য নয়। দেশ এগিয়ে যাবে আর বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না এটা কোন শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য শুভলক্ষণ নয়। শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বিভাজন রেখে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা গঠন করা কখনো সম্ভব নয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় তাই আনতে হবে আমুল পরিবর্তন। যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার গতি সঞ্চার করা সম্ভব নয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি ন্যায় বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নতি করতে হবে।
গত ৩০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে শিক্ষক নেতাদের সাথে কর্তন বন্ধ নিয়ে মিটিং এ মহাপরিচালক বলেছিলেন বদলি প্রথা চালু হবে ১০০% বলতে পারি। আপনারা যেভাবে চান সেভাবেই হবে।
কিন্তু কখন থেকে হবে তা বলেননি। সঠিক তারিখ আজও জানা গেল না। শুধুই মনে হয় আই ওয়াস করানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় বদলি একান্ত জরুরি।
শিক্ষা ব্যবস্থায় বদলি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষা ব্যবস্থার গতি সঞ্চার করতে বদলির বিকল্প কিছু নাই। বদলি প্রথা চালু হলে নতুন অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ শিক্ষক পাওয়া যাবে। পাঠদান প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সিন্ডিকেট চিরতরে দূর হবে।বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বদলি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আধুনিকায়ন প্রয়োজন। প্রাচীন প্রথা বিলুপ্ত করে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল যুগে রুপান্তর এখন সময়ের দাবি।
একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন চাকরি করার ফলে শিক্ষকদের গতি স্থবির হয়ে পড়ে।যদি বদলি প্রথা চালু থাকত তাহলে শিক্ষকদের পাঠদানের স্পীড বৃদ্ধি পেত । নতুন কর্মস্থলে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য থাকত প্রতিযোগিতা। পাঠদান পদ্ধতি হত উন্নত। শিক্ষার্থীরা হত উপকৃত। নতুন অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী পাঠদানের মাধ্যমে সৃজনশীল করে গড়ে তুলত। এতে শিক্ষার্থীর মধ্যে গড়ে উঠত প্রতিযোগিতা।
সরকারি এবং বেসরকারি সহ বিভিন্ন পেশায় বদলি ব্যবস্থা চালু আছে। শুধু মাত্র বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাদ। যেখানে বদলি সিস্টেম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বদলি সিস্টেম প্রতিটি পেশাকে এনে দিয়েছে সাফল্যের গতি।
অধিকাংশ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাড়ি বা নিজ জেলা থেকে দূর দূরান্তে চাকরি করে।সহকারি শিক্ষকের বি এড ছাড়া স্কেল ১২৫০০ টাকা, বি এড সহ স্কেল ১৬০০০ টাকা, টাইম স্কেল সহ স্কেল ২২০০০ টাকা, সহকারি প্রধান শিক্ষকের স্কেল ২৩০০০ টাকা, প্রধান শিক্ষকের স্কেল ২৯০০০ টাকা।বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা। সর্বসাকুল্যে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসারের ভরনপোষণ করাই কঠিন।
চাকরি করলে তো বাসস্থান বা বাসা প্রয়োজন হবে। আর থাকার জন্য চাই ঘর ভাড়া। দেখা যাচ্ছে মফস্বল এলাকায় ঘর ভাড়া সর্বনিম্ন ৪০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা এবং শহরাঞ্চলের ঘর ভাড়া সর্বনিম্ন ৮০০০ টাকা থেকে ১৫০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২০০০০ টাকা পর্যন্ত। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যা সরকারি অংশ বা অনুদান পায় তা দিয়ে ঘর ভাড়া দেওয়ার পর আর কি অবশিষ্ট থাকে বলুন? সংসারের ভরনপোষণ করবে নাকি ঘর ভাড়া দিবে। এমন হতাশায় অতিবাহিত হয় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাস্তব জীবন।নুন আনতে পানতা ফুরায় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। তবুও নেই কারোর মাথা ব্যাথা। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য নেই কোন উদ্যোগ।
একটি দেশের মানদণ্ড নির্ভর করে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। এই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যদি সমতায়ন না থাকে। তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে বাধ্য। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে এক লেভেল।বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় বদলি প্রথা না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানে সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। সঠিক পাঠদান প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে হচ্ছে ব্যাহত।
বর্তমান সরকার বদলি বিষয়ে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে যে সুনাম অর্জন করেছিল তা আজ হতাশায় পরিগনিত হচ্ছে। বলেছিলেন ২০২০ খিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে বদলি কার্যক্রম চালু করা হবে। এই মর্মে সফটওয়্যারে কাজ চলছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এর কোন অগ্রগতি প্রতিয়মান হচ্ছে না। তাই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজমান। এতে শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়বে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থার গতি সঞ্চার করতে তাই বদলি প্রথা একান্ত জরুরি।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিকট বিনিত অনুরোধ অনতিবিলম্বে বদলি প্রথা চালু করে শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে সহযোগিতা কামনা করছি। সেক্ষেত্রে বদলি ব্যবস্থা দ্রুত চালু করার লক্ষ্যে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী সহ সকল উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
মোঃ আবুল হোসেন
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাশিস নজরুল