পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে পিছিয়ে পরছে ছেলেরা

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ০৮:২৩ এএম, ৮ আগস্ট ২০১৯

অলোক আচার্য
ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় ফলাফলে পিছিয়ে পরছে। কথাটি ঘুরিয়ে বললে বলা যায়, মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই বিষয়টি প্রায় একই রকম। চলতি বছর এইচএসপি পরীক্ষার ফল বের হলে দেখা যায় এবারেও মেয়েরাই ছেলেদের তুলনায় ভালো ফল করেছে। যেখানে মেয়েদের মোট অংশগ্রহনের ওপর পাসের হার ৭৬ দশমিক ৪৪ সেখানে ছেলেদের মোট অংশগ্রহনের তুলনায় পাসের হার ৭১ দশমিক ৬৭ ভাগ। এই ফলাফলটি আমাদের জন্য সার্বিকভাবে ইতিবাচক না নেতিবাচক তা নিয়ে মনত্মব্য করার আগে কিছু বিষয়ে আলোচনার দরকার আছে। আমার ব্যক্তিগত মত হলো যদি এটা কোন একটি নির্দিষ্ট বছরের চিত্র হতো অথবা যদি এই পিছিয়ে পরার হারের পার্থক্য উনিশ-বিশ হতো তাহলে আমার কোন মাথাব্যাথা থাকতো না বা এ নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠার অবকাশ থাকতো না বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার জন্যই আমাদের বহু বছর ধরে রীতিমত সংগ্রাম করতে হয়েছে। অবশেষে মেয়েরা তা পারছে। মেয়েদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, ফলাফল এবং চাকুরিতে নিয়োজিত হওয়ার হার গত কয়েক বছর ধরেই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীতে ছেলেদের ফলাফল এবং অন্যান্য দিক অবনতি হয়েছে।

গত চার পাঁচ বছর ধরেই প্রত্যেক পাবলিক পরীক্ষার পর দেখা যায় ছেলেরা ফলাফলের দিক থেকে মেয়েদের চেয়ে পিছিয়ে পরছে। এই পিছিয়ে পরার পার্থক্যও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই পার্থক্য বেশ চোখে পরার মত। কোন ঘটনা ঘটার পেছনে অপরাপর বেশ কিছু কারণ জড়িত থাকে। আমার মনে হয় ছেলেদের ড়্গেত্রে বর্তমানে প্রধান বাধা হচ্ছে সেই ছাত্রের পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বলতা। নিয়ন্ত্রণ দুর্বলতা বলতে বোঝায় মূলত কোন অভিভাবক তার ছেলে সন্তানের ওপর কতটুকু নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারছে। সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা অভিভাবকের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এই আধুনিক যুগে কেবল সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করলেই হবে না বরং সন্তানের হাতে থাকা স্মার্টফোন বা ল্যাপটপকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মেয়েদের ওপর সত্যিকার অর্থে অভিভাবকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে যা কোন ছেলে সন্তানের ওপর রাখা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে আজকের এই মোবাইল ফোনের যুগে। যদিও মেয়েরাও মোবাইল ব্যাবহার করে তবে সে হারও ছেলেদের তুলনায় অনেক কম। বাস্তব চিত্র হলো আমাদের সদ্য মাধ্যমিকে পা রাখা ছেলেদের হাতেও দামী মোবাইল ফোন দেখতে পাওয়া যায় যা মেয়েদের ড়্গেত্রে পাওয়া যায় না। তাছাড়া একজন মাধ্যমিক পড়-য়া সন্তান যখন রাত আটটার সময় বাড়ি ফিরছে তখন খুব কম অভিভাবকই আজকাল তার এই সময়ে বাড়ি ফেরার
ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। এটা মনে হয় অনেক অভিভাবক মেনেই নিয়েছেন যে ছেলে এই সময় পর্যনত্ম বাড়ির বাইরে থাকবে। বরং আড্ডা না দিলেও বন্ধু মহলে তার নাম ভীরম্ন বা এজাতীয় কিছু একটা হয়ে যায়। আবার এর বেশি সময়ও আড্ডা দিতে দেখা যায় তাদের। কিন্তু; সে তুলনায় মেয়েদের এতটা স্বাধীনতা এখনও পরিবার থেকে দেওয়া হয়নি যে রাত আটটা নয়টায় বাড়ি ফেরে। বরং সে সময়টুকু তারা বইয়ের পেছনে কাটায়। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটাতেও ছেলেরা মেয়েদের থেকে এগিয়ে রয়েছে। সার্বিকভাবে বললে বলা যায় মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বইয়ের সাথে অনেক বেশি সময় কাটাচ্ছে। আর যে কারণে মেয়েরা ফলাফলেও ক্রমাগতভাবে এগিয়ে চলেছে।

ছেলেদের ক্রমাগত পিছিয়ে পরা আমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এ কারণে না যে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। বরং মেয়েদের এগিয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু একটি দেশের জন্য ছেলে এবং মেয়ে সমানতালে এগিয়ে যাওয়া আবশ্যক। একটা সময়ে যখন মেয়েরা লেখাপড়ার অধিকার থেকেই বঞ্চিত ছিল তখন আমরা সত্যিকার অর্থেই পিছিয়ে ছিলাম। তারপর মেয়েদের অধিকার নিশ্চিতকরণের প্রয়াস করার অংশ হিসেবে মেয়েরা আজ দুর্দম গতিতে এগিয়ে চলেছে।
ফলাফলে ছেলে মেয়ে সমান সমান হবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। সেটা সর্বতোভাবে সম্ভবও নয়। তবে ফলাফলের পার্থক্যটা খুব বেশি না হয়ে তীব্র প্রতিযোগীতামূলক হোক। সেড়্গেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকাটা বেশি হওয়া উচিত। অভিভাবক সনত্মানদের বন্ধু। তার সাথে মিশতে হবে। তার মনোভাব বুঝতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে। ভালো মন্দ রাস্তা স্পষ্ট করতে হবে। একজন সন্তানের সবকিছুর প্রয়োজন আছে। বিজ্ঞানের যুগে তাকে মোবাইল বা ট্যাব থেকে আলাদা করা
যাবে না। তাই সে কম্পিটউটার ব্যাবহার করবে। তবে তা কি কাজে ব্যাবহৃত হচ্ছে তা লক্ষ করতে হবে। আমাদের ছাত্ররা যৌক্তিক বয়স হলে রাজনীতি করবে। তবে অপরিপক্ক বয়সে রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। মাথাটা লেখাপড়াতেই খরচ হোক। মোট কথা সনত্মানকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। কারণ যদি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয় তাহলে এই ফলাফলের পার্থক্য কেবল বাড়তেই থাকবে। ছেলেময়ে সমানতালে লেখাপড়া করুক, চাকরি করুক,দেশের উন্নয়নের অবদান রাখুক এটাই প্রত্যাশা।

অলোক আচার্য
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
পাবনা।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)