নির্ভীক ও দূরদর্শি নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ১৫ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১০:১০ এএম, ১৫ আগস্ট ২০১৯

শেখ মুজিবুর রহমান
নিজস্ব প্রতিনিধি .||
২৫ মার্চ,১৯৪৭ সাল। ব্রিটিশের প্ররোচনায় উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধর্মীয় বিভাজনের সীমারেখায় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির নেশায় মত্ত। ব্যতিক্রম ছিলেন একজন মানুষ। মুসলিম লীগের তৎকালীন প্রগতিশীল ধারার তরুণ নেতা ২৭ বছর বয়সী শেখ মুজিব দুই বাংলার বাঙালিদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করলে গঠন করা হয় বেঙ্গল মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটি।

তীব্র জনমতের মুখে বেঙ্গল মুসলিম ওয়ার্কিং কমিটি এক ঐতিহাসিক ফর্মুলা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে। তাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। জনসাধারণের ভোটে একটা গণপরিষদ হবে। সেই গণপরিষদ ঠিক করবে বাংলাদেশ হিন্দুস্থান না পাকিস্তানে যোগদান করবে, নাকি স্বাধীন থাকবে? ১৯৪৭ সালে এই ফর্মুলা নিয়ে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বাঙালি নেতা শরৎ চন্দ্র বসু দিল্লিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও জহরলাল নেহেরুর সাথে দেখা করতে যান। শরৎ বসু কংগ্রেসের নেতাদের সাথে দেখা করতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। গান্ধী ও পণ্ডিত নেহেরু কোনো কিছুই না বলে শরৎ বাবুকে পাঠিয়ে দেন কংগ্রেস নেতা সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের কাছে। আর মিস্টার প্যাটেল শরৎ বাবুকে খুব কঠিন কথা বলে বিদায় দিয়েছিলেন।
কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যোগসাজশে ১৯৪৭ সালে যুবক শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। সেই স্বপ্ন মহান পুরুষ মুজিব পূরণ করেছিলেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে। মহাসংগ্রামী আর দীর্ঘ ছিল সে পথচলা।

স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনে তরুণ বাঙালি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি শেখ মুজিব গঠন করলেন ছাত্রলীগ নামের এক অপরাজেয় ছাত্রসংগঠন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ। কারাগারে বন্দী ২৯ বছরের শেখ মুজিবকে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর যত সময় গেছে, শেখ মুজিব হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের প্রাণ। ভাষা আন্দোলনের সুকঠিন সময়ে কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবই ছিলেন নেতা-কর্মীদের প্রাণপুরুষ।

১৯৫৩ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমানকে আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৫৫ সালে সংগঠন থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয় এবং শেখ মুজিবকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ-এইড দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করলেও বাঙালি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালে মন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেন শেখ মুজিব।

ভবিষ্যতের স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে শেখ মুজিব উদ্যোগী হয়ে সমমনা ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠন করলেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামের গোপন সংগঠন। প্রতি মহকুমায় এবং থানায় নিউক্লিয়াস গঠন করেন। একই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের জাতীয় সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। প্রস্তাবিত ৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এ বছরের ১ মার্চ শেখ মুজিবকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ১৯৬৮ সালের পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে ১ নম্বর আসামী করে দায়ের করে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’। সাথে আসামী করা হয় ৩৫ জন সামরিক ও সিএসপি কর্মকর্তাকে। পুরো দেশ জুড়ে তীব্র গণআন্দোলন শুরু হয়। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জনগণের অব্যাহত চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার শেখ মুজিবসহ সকল আসামীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে প্রায় ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে জয় বাংলা স্লোগানে শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

৫ ডিসেম্বর তারিখে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর পূর্ববাংলার আনুষ্ঠানিক নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। ১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার আগে বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিলেন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ। ১৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু তার দলের নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে ‘নৌকা’ প্রতীক পছন্দ করেন। ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৭১ সালের ৩ রা জানুয়ারি রেসকোর্সের জনসভায় বঙ্গবন্ধু ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা এবং জনগণের প্রতি অনুগত থাকার শপথ গ্রহণ করেন। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার মালিক হওয়ার কথা বাংলাদেশের জনগণের। কিন্তু পাকিস্তানের অহংকারী ক্ষমতাসীনদের মাথায় ছিল অন্য চিন্তা। পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনার নাম করে ঢাকায় আসেন। তিন দিন বৈঠক চলার পর আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়। ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে ভুট্টোর দাবির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘ভুট্টো সাহেবের দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।ক্ষমতার মালিক এখন পূর্ব বাংলার জনগণ”।

১ মার্চ ইয়াহিয়া খান অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা দিলে বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ কার্যকরী পরিষদের জরুরী বৈঠকে ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল আহবান করা হয়। সংবাদ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ মুজিব তিন মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘৭ তারিখের মধ্যে সরকারি মনোভাব পরিবর্তন না হইলে রেসকোর্সে আমি আমার ভাষণ দিয়া দিব।’

৭ মার্চের আগেও নানা ভাষণে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জন্য আলাদা রাষ্ট্র কায়েমের কথা বলেছেন। ৭ মার্চ সারাদেশে টানটান উত্তেজনা। দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে কখন তাদের নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেও ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের ‘স্বাধীনতা ও মুক্তি’ অর্জনের স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন।

১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ৭ মার্চেই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেদিন পরিষ্কার বলা হয়েছিল, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’

৭ মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক কৌশলে বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই মূলত পূর্ব বাংলায় বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। সাত মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই ঐতিহাসিক ৬ দফা মূলত স্বাধীনতার এক দফায় রূপান্তরিত হয়। অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা, টেলিভিশন, বেতারসহ সমস্ত দফতর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে। পাকিস্তানীরা বুঝে যায়, পূর্ব পাকিস্তান তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। বাঙালির নাম ও নিশানা মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে গোপনে সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করে ইয়াহিয়া সরকার। বাঙালি অফিসারদেরকে কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়ে এসে পাকিস্তানী অফিসারদেরকে গুরুত্বপূর্ণ সব পদে বসানো হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসতে থাকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সৈন্য।

ততদিনে ইতিহাসের বৃহত্তম আত্মত্যাগ করার জন্য বাঙ্গালি জাতিকে প্রস্তুত করে ফেলেছেন বঙ্গবন্ধু। ২৩ মার্চ ভোরে পাকিস্তান দিবসে বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে তার বাসভবনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেন। এটা ছিল সেই পতাকা যা বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের জুন মাসে পল্টন ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে জয় বাংলা বাহিনীর হাতে গচ্ছিত রেখেছিলেন। ২৩ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় ‘জয় বাংলা’ বাহিনীর কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজ শেষে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হাতে গার্ড অব অনার প্রদানকারী দলের সালাম গ্রহণ করেন। এদিকে ইয়াহিয়া খান আর বঙ্গবন্ধুর মধ্যে কয়েক দফা আলোচনাও হয়। বঙ্গবন্ধু নিজে থেকে আলোচনা ভেঙে দেন নি। কারণ, তিনি বল ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের কোর্টে।

২৫ মার্চ রাত ৮ টায় ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগে নির্দেশ দিয়ে যান গণহত্যা শুরু করার। রাত সাড়ে এগারটায় পাকিস্তানী সেনারা ঢাকাবাসীর উপর বর্বর হামলা শুরু করে। ওদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সেনা হামলা শুরুর প্রায় সাথে সাথেই স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইংরেজিতে লেখা এ ঘোষণাটি ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ দলিলপত্র’-৩য় খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা আছে।

ওয়্যারলেস, টেলিফোন ও টেলিগ্রাম দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করা হয়।
স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু আরেকটি বার্তা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশে বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠানো হয়। সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর সেনানিবাসে বাঙালি সৈন্য ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমণ্ডির ৩২ নং বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং এর তিন দিন পর তাকে বন্দি অবস্থায় পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছায় রাতে দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে। ঢাকার মগবাজার ভিএইচএফ স্টেশন থেকে প্রেরিত বার্তাটি চট্টগ্রামের সলিমপুর ভিএইচএফ স্টেশনে রিসিভ করেন টেকনিশিয়ান আব্দুল হাকিম। আব্দুল হাকিম স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তা রিসিভ করে টেলিফোনে সহকারী প্রকৌশলী গোলাম রাব্বানিকে জানান। গোলাম রাব্বানি সে বার্তা লিখে নিয়ে সাবেক মন্ত্রী একে খান সাহেবের বাসায় টেলিফোন করলে তার মেয়ে, আওয়ামী লীগ নেতা এম আর সিদ্দিকীর স্ত্রী ফোনটি রিসিভ করে বার্তাটি লিখে নেন। দুপুরে ঘোষণাপত্রটি চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নানের কণ্ঠে প্রচারিত হয়। ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এম এ হান্নানের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাপত্রটি আবারও প্রচার করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসাররাও অংশ নিয়েছে, এটা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর প্রয়োজন অনুভব করায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ধারেকাছে অবস্থানকারী কোনো বাঙালি অফিসারকে বেতারকেন্দ্রে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তারা প্রথম যোগাযোগ করেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদে চট্টগ্রামে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে প্রেষণে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকা রফিকুল ইসলামের সাথে। ক্যাপ্টেন রফিক ২৪ মার্চ রাতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিলেন। যুদ্ধরত ছিলেন বলে ক্যাপ্টেন রফিক চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম বেতারের নিজস্ব শিল্পী এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রধান উদ্যোক্তা বেলাল মোহাম্মদ ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় বেলাল মোহাম্মদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তৈরি করা বিবৃতি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তার ঘোষণার রেফারেন্সসহ পাঠ করেন ক্যাপ্টন রফিক।

১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়। এই মুজিবনগর সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বলা বাহুল্য, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সব সাহস আর ত্যাগের উৎস কেন্দ্র। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ তাই সমার্থক।
যার জন্ম না হলে আমরা আজ এই স্বাধীন বাংলা পেতাম না, যার নেতৃত্ব না থাকলে আমরা আজ নিজেদের অধিকার ফিরে পেতাম না।সেই মহান নেতাকেই ১৯৭৫ সালের ১৫-ই আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানী এজেন্টদের ঘাতক দ্বারা সপরিবারে নিহত হন।শুধু মাত্র আল্লাহর অসীম রহমতে বেঁচে যান আজকের আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। তাই তো আজও বাঙালী হৃদয়ে ধ্বনিত হয়,

যদি রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গ বন্ধু মরে নাই,তাহলে জাতি পেত এক মহান নেতা,আমরা ফিরে পেতাম জাতির পিতা।
বঙ্গ বন্ধু বেঁচে আছেন,বেঁচে থাকবেন কোটি কোটি বাঙালীর হৃদয়ে।

বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শেষ করছি।

মোহাম্মদ মোকাররম হোসেন (আপন)
সহকারী প্রধান শিক্ষক।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)