এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা চায়
নিজস্ব প্রতিনিধি ||
শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। এ বিষয়ে কারো সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু আমাদের দেশে পাঠ্যপুস্তকে ও সেমিনারে বক্তৃতায় যেভাবে বলা হয়, ‘শিক্ষকের মর্যাদা সবার উপরে’ বিষয়টা নিয়ে আমাদের দেশের শুধু শিক্ষকদের নয়, বরং বেশির ভাগ জনগণেরও সন্দেহ রয়েছে। কারণ পুঁথিতে লেখা ও মুখে বলার সাথে বাস্তবতার তেমন মিল নেই। বাস্তবে শিক্ষকদের সব ক্ষেত্রে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করে নিজদেরকে উন্নত জাতি হিসেবে অধিষ্ঠিত করেছে জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো। আমাদের দেশে শিক্ষকদের মর্যাদা কোন দিক দিয়ে সবার উপরে? আর্থিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষকেরা সবচেয়ে অবহেলিত।
নিম্নে ৫ লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বৈষম্যের কিছু খতিয়ান তুলে ধরা হল।
১.বাড়ি ভাড়া % নাই ১০০০/-
২.চিকিৎসা ভাতা ৫০০/-
৩.টাইম স্কেল বন্ধ।
৪.উৎসব ভাতা - ২৫%
৫.বদলি নাই।
৬.পেনশনের সুবিধা নাই।
৭.সন্তানের শিক্ষা ভাতা নাই।
৮.পদোন্নতির সুযোগ নাই।
৯.টিফিন ভাতা নাই।
১০.উচ্চতর স্কেল ঘোষণা আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নাই।
১১.বাড়তি সুবিধা ছাড়া অতিরিক্ত ৪% কর্তন।
আর এই সব কিছুই রয়েছে একটি মাত্র দাবির মাঝে অন্তর্ভুক্ত তা হচ্ছে জাতীয়করণ।
আমাদের আর্থিক সমস্যার এই কারণে দেশের নাটক-সিনেমায় শিক্ষকদের সামান্য একজন ‘মাস্টার’ হিসেবে তাচ্ছিল্যের সাথে উপস্থাপন করা হয়। সামাজিকভাবে ও শিক্ষকেরা কি খুব উচ্চ মর্যাদার অধিকারী? বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে যেভাবে মর্যাদা দেয়া হয়, তার সিকি ভাগ সম্মানও কি শিক্ষকদের দেয়া হয়? কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তবু কিছুটা সামাজিক মর্যাদা দেয়া হয়। কিন্তু জাতি গঠনে যে শিক্ষকেরা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন, সেই মানুষ গড়ার ‘আসল কারিগর’ প্রাথমিক আর মাধ্যমিক শিক্ষকেরা সামাজিক দিক দিয়ে আজো চরমভাবে অবহেলিত।
শিক্ষার ভিত্তি স্থাপনকারী প্রাথমিক পর্যায়ে সহকারী শিক্ষকদের পদমর্যাদা এখনো ‘তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী’। তাহলে আমাদের দেশে শিক্ষকের মর্যাদা কিভাবে সবার উপরে হলো? অনেকে বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। হ্যাঁ, শিক্ষকদের আর্থসামাজিক মর্যাদা আগের চেয়ে বেড়েছে, কিন্তু সেই তুলনায় অন্য পেশাজীবীদের আর্থসামাজিক মর্যাদা বেড়েছে তাদের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা শিক্ষকদের বাহ্যিক দিকটা দেখি; কিন্তু কখনো কি তাদের চাপা কান্না অনুভব করার চেষ্টা করেছি? ‘শিক্ষকদের মর্যাদা সবার উপরে’ কথাটি শুনলে আমাদের দেশের শিক্ষকেরা গর্বিত হন না, বরং মনে মনে লজ্জিত হতে হয় তাদের।
তাই পরিশেষে বলবো,গুণগত মানের শিক্ষায় প্রয়োজন গুণগত মানের শিক্ষক। আর শিক্ষকরাই পারেন গুণগত মানের শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে। তাই দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাকারী সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট বিনীত অনুরোধ,অবিলম্বে শিক্ষকদের আকর্ষনীয় সতন্ত বেতন স্কেল প্রদানসহ, শিক্ষাব্যবস্থ্যা জাতীয়করণের ঘোষণা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
( শিক্ষায় বিনিয়োগ, অধিক লাভজনক )।
মোঃ আজাদ,
সহ-গনসংযোগ সম্পাদক,
বাশিস (কেন্দ্রীয় কমিটি) নজরুল।