ভোকেশনাল শিক্ষায় অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১০:০১ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০১৯

প্রকৌশলী রিপন কুমার দাস
প্রকৌশলী রিপন কুমার দাস ||
ভোকেশনাল শিক্ষাক্রম বর্তমান বিশ্বের একটি পেশা ভিত্তিক গুরুত্বপুর্ন শিক্ষা ব্যবস্থা। দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ভোকেশনাল শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই
সরকার দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত কর্মমুখী প্রকৌশল শিক্ষা চালু করার
ঘোষনা দিয়েছে । এক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ২টি ট্রেড থাকবে, সকল শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামুলক ভাবে ১টি ট্রেড বিষয় নিয়ে নির্দিষ্ট একটি পেশায় দক্ষতা
অর্জন করতে হবে। প্রতিটি ট্রেডে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে । এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ের ২টি ট্রেডের জন্য ২ জন
ট্রেড ইন্সট্রাক্টর ( ১টি ট্রেড ১জন ট্রেড ইন্সট্রাক্টর) নিয়োগের জন্য নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন। সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা
বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জনবল কাঠামোয় ২জন অতিরিক্ত ট্রেড শিক্ষক অর্ন্তভুক্ত করার জন্য অর্থ মন্ত্রনালয়ে চাহিদা পত্র প্রেরণ
করেছে। অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে ছাড়পত্র পাওয়া সাপেক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তার এম.পি.ও নীতিমালা সংশোধন করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ২জন করে
ট্রেড শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করবে । পরবর্তীতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এন.টি.আর.সি.এ এর মাধ্যমে শিক্ষক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সমুহ শিক্ষক নিয়োগ প্রদান
সাপেক্ষে শুন্যপদ হিসাবে দ্রুত এম.পি.ও ভুক্ত হবে । কিন্তু একই সাথে ২১০০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর মধ্যে এম.পি.ও ভুক্ত ১৬১৯৭ টি (নিম্ন মাধ্যমিক ৩২৬৮,
মাধ্যমিক ১২৯২৯) ও ৯৫০০ মাদ্রাসায় মোট ৩০৫০০ প্রতিষ্ঠানে ২টি করে ট্রেডে ২ জন করে সম্পুর্ন নতুন ট্রেড শিক্ষক নিয়োগ করে কোর্স পরিচালনা করা শুধু
অবসম্ভবই নয় অবাস্তবও।

সেক্ষেত্রে বর্তমানে যেসকল প্রতিষ্ঠানে এস.এস.সি (ভোকেশনাল) শিক্ষাক্রম রয়েছে, সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের একটি অংশ এন.টি.আর.সি.এ অথবা মা.উ.শি
অথবা প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষক নিয়োগ কমিশন এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করলে কাঙ্খিত মান কিছুটা অর্জন করতে সক্ষম হবে। বর্তমানে দেশে ২৫০০টির অধিক
প্রতিষ্ঠানে এস.এস.সি (ভোকেশনাল) ও ১৬০টির অধিক প্রতিষ্ঠানে দাখিল (ভোকেশনাল) শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে, এর মধ্যে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক
ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে ৯৪৩ টির কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান এম.পি.ও ভুক্ত রয়েছে, অবশিষ্ট ১৭০০ এর অধিক প্রতিষ্ঠান এম.পি.ও ভুক্ত নয়। যে সকল প্রতিষ্ঠান
এম.পি.ও ভুক্ত নয় সে সকল প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ ট্রেড শিক্ষকরা দীর্ঘদিন যাবৎ মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে । তাই তাদের আর্থিক দুর্দশা কিছুটা
লাঘব ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বয়স ও ইন্ডেক্স শিথিল সাপেক্ষে সরকারের নতুন এই বিশাল কর্মযজ্ঞে অর্ন্তভুক্ত করার জন্য এন.টি.আর.সি.এ এর মাধ্যমে অগ্রাধিকার
ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা যেতেই পারে।

এছাড়া এই বিশাল কর্মযজ্ঞে অভিজ্ঞ এম.পি.ওভুক্ত কারিগরি শিক্ষকদেরও অর্ন্তভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন, অভিজ্ঞ এম.পি.ও ভুক্ত কারিগরি শিক্ষকদের যদি নতুন
কোর্সে সামিল করা হয় তবে তাদের অভিজ্ঞতা দ্বারা নতুন কোর্সটিকে সঠিক ও সুন্দর ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এন.টি.আর.সি.এ এর সনদবিহীন
এম.পি.ওভুক্ত ও ননএম.পি.ও শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতি ১ বছরের অভিজ্ঞতার জন্য ৫ নম্বর বন্টন করা যেতে পারে, অর্থাৎ ২০ বছর অভিজ্ঞরা ১০০
নম্বর, ১৯ বছর অভিজ্ঞরা ৯৫ নম্বর, ১০বছর অভিজ্ঞরা ৫০ নম্বর প্রাপ্ত হবেন। এন.টি.আর.সি.এ এর সনদবিহীন অভিজ্ঞ এম.পি.ওভুক্ত ও ননএম.পি.ও শিক্ষকরা
তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান প্রতিষ্ঠান প্রধানের ছাড়পত্র গ্রহন সাপেক্ষে এন.টি.আর.সি.এতে আবেদন করলে তারা তাদের আবেদনকৃত নতুন প্রতিষ্ঠানে
নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেতে পারবেন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে ননএম.পি.ও ও এম.পি.ও ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ট্রেড থেকে দুইজন ট্রেড
শিক্ষকের মধ্য হইতে একজনের অধিক ট্রেড শিক্ষককে প্রতিষ্ঠান প্রধান ছাড়পত্র প্রদান করতে পারবেন না । তাই মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায়
৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ভোকেশনাল শিক্ষায় যদি অভিজ্ঞ ট্রেড শিক্ষকদের কাজে লাগানো যায় তবে বেকার সমস্যার সমাধানসহ দেশকে উন্নয়নশীল থেকে
উন্নত রাষ্ট্রে রুপান্তর করা সম্ভব হবে।

প্রকৌশলী রিপন কুমার দাস
কলাম লেখক ও ট্রেড ইন্সট্রাক্টর
ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
পটুয়াখালী।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)