শিক্ষা খাতে অপচয় মাধ্যমিকে প্রাথমিক নয়

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ০৬:৩৪ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০১৯

প্রতীকী ছবি
শিক্ষা প্রতিদিন ডেস্ক ||
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতিই উন্নতির চরম শিখরে পৌছাতে পারেনা । কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা নামক মৌলিক চাহিদা থেকে বহু মানুষই শুধুমাত্র
সরকারের সঠিক ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের কারনে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই বর্তমান সরকার শিক্ষাকে মানুষের দোরগোরায় পৌছে দেওয়ার জন্য একটি সময় উপযোগী
শিক্ষানীতি ঘোষনা করেছে । যেখানে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা স্তর ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে, মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর ৯ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আর তার পরবর্তী শ্রেণি সমূহ উচ্চ শিক্ষা স্তরের অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকরায় কিছু প্রাথমিক বিদ্য্যলয় ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় সমূহ স্থাপনের দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়েছে ।
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে বিভক্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নামে এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ নামে দুইটি বিভাগ চালু করা হয়েছে যেখানে দুইজন পুর্ন মর্যাদার সচিব নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে । ভবিষ্যতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে ভেঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নামে পৃথক বিভাগ করা হবে ।

তারপরও কি শিক্ষাখাতের শৃঙ্খলা ও অপচয় কমানো সম্ভব হবে ? মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রাথমিক অবস্থায় ১৬০০০ টাকা স্কেল প্রাপ্ত হন, পক্ষান্তরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রাথমিক পর্যায় প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ১৪তম গ্রেডে ১০২০০ টাকা ও প্রশিক্ষন বিহীন ১৫তম গ্রেডে ৯৭০০ টাকা স্কেল প্রাপ্ত হন, যদিও বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ১০তম গ্রেডে ১৬০০০টাকা, নবসৃষ্ঠ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১১তম গ্রেডে ১২৫০০টাকা এবং প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষন বিহীন সহকারী শিক্ষকগন একই হারে ১২তম গ্রেডে ১১৩০০টাকার স্কেল প্রাপ্ত হবেন।
দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে যদি প্রাথমিক স্তর সরিয়ে নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত করা যায় তবে সরকার প্রচুর আর্থিক অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালায়ের প্রাথমিক স্তর (৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি) এ শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করতে হলে বিদ্যালয় ভেদে মাসিক ৬০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন গুনতে হয় এবং পরীক্ষার সময় বিদ্যালয় ভেদে ২০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পরীক্ষা ফি হিসাবে বিদ্যালয়ে জমা দিতে হয়, যা অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর জন্য কষ্ঠসাধ্য হয়ে পড়ে । কিন্তু পক্ষান্তরে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীকে কোন মাসিক বেতন দিতে হয় না এবং পরীক্ষার ফি ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকার বেশী হয় না। তাই যদি শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে প্রাথমিক স্তর (৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি) চালু করা হয় তবে দেশের সকল শিশুকে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিদ্যালয় ঝড়ে পড়া শতভাগ কমানো সম্ভব হবে । তাই দেশের সকল নি¤œ মাধ্যমিক (প্রাথমিক স্তর) বিদ্যালয় সমুহকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে রুপান্তর করা প্রয়োজন এবং সেখানে কর্মরত শিক্ষকদের বিভিনè প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলীর মাধ্যমে পদায়ন করে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করণ ও পদ খালি থাকা সাপেক্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করণ। এছাড়া যতদিন পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানোর জন্য উপর্যুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হবে, তার পুর্ব পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞান, ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কর্মমুখী প্রকৌশল শিক্ষা এই ৭ বিষয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়েনের মাধ্যমিক ও নি¤œ মাধ্যমিক স্তরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে, কোনক্রমেই উপজেলার বাহির থেকে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান না করা ভাল । অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সম্মানী হিসাবে ১০০০০ টাকা প্রদান এবং অবসরপ্রাপ্ত খন্ডকালীন শিক্ষকদের বয়স সর্বোচ্চ ৭০ বছর করা যেতে পারে। এছাড়া প্রাথমিক স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং কর্মমুখী প্রকৌশল শিক্ষা বিষয় পাঠদানের জন্য একজন করে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে এবং প্রি-প্রাথমিক শ্রেণিতে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের চারুকলা ও কারুকলায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চারু ও কারুকলা শিক্ষক হিসাবে পদায়ন করা যেতে পারে।
অবশিষ্ট মাধ্যমিক শাখা নবম থেকে দশম শ্রেনীর জন্য একটি নতুন জনবল কাঠামো সৃষ্টি করা যেতে পারে, এক্ষেত্রে প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (নবম ও দশম শ্রেণি) প্রধান শিক্ষক, বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞান, শারীরিক শিক্ষা, ধর্ম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সহকারী লাইব্রেরীয়ান, অফিস সহকারী ১ জন করে, অফিস সহায়ক ২জন করে মোট ১১টি পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন । এছাড়া ভোকেশনাল শাখার ন্যায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৪০জন করে শিক্ষার্থীর ভর্তির কোঠা সৃষ্টি করে প্রতিটি বিভাগের জন্য ২জন করে শিক্ষককের পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

বিজ্ঞান শাখায় ২জন শিক্ষকের একজন ভৌত বিজ্ঞান ও আরেকজন জীবন বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২জন শিক্ষকের একজন হিসাব বিজ্ঞান ও অপরজন ব্যবস্থাপনা, মানবিক বিভাগের একজন অবশ্যই ভূগোল ও আরেকজন যে কোন বিষয় এর পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে, কোনক্রমেই বিভাগের ক্ষেত্রে একই বিষয়ে পাশকৃত দুই জন শিক্ষককে একই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রদান করা যাবে না।
সংযুক্ত ভোকেশনাল শাখার শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যেমন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর হতে আলাদা এম,পি,ও শীটে বেতন ভাতাদি প্রদান করা হয়, তেমনি ভাবে বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োজিত শিক্ষকদের জন্য মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক শাখায় ২টি আলাদা এম,পি,ও শীট প্রস্তুত করা প্রয়োজন। নি¤œ মাধ্যমিক (প্রাথমিক) এর এম,পি,ও শীট এর বেতন ভাতাদি ভোকেশনাল শাখার ন্যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক এর এম,পি,ও শীট এর বেতন ভাতাদি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বহন করবে। নিম্ন মাধ্যমিক এম,পি,ও শীটে (পুর্বের নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্যাটার্ন অনুযায়ী) সহকারী প্রধান শিক্ষক, সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান, ধর্মীয়, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য, শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা, অফিস সহায়ক (আয়া ও নৈশ প্রহরী) ২জন শ্রেণি শাখা এবং মাধ্যমিক এম,পি,ও শীটে প্রধান শিক্ষক, বাংলা, ইংরেজী, হিসাব বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সহকারী লাইব্রেরীয়ান, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক (নিরাপত্তাকর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী) ২জন, থাকবে, যে শ্রেণির বিপরীতে শাখা শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল ঐ স্তরের এম,পি,ও শীটে শাখা শিক্ষককে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।
মাধ্যমিক স্তরে যদি শিক্ষক স¦ল্পতা থাকে তবে নিম্ন মাধ্যমিক থেকে শিক্ষক নিয়ে মাধ্যমিক স্তরে নেওয়া যেতে পারে।

নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের এম,পি,ও শীট ধরে প্রাথমিক স্তর হিসাবে জাতীয়করণ করে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করা যেতে পারে, যদি কোন শিক্ষক প্রাথমিক স্তরে জাতীয়করণ হতে ইচ্ছুক না হয় তবে তাকে মাধ্যমিক স্তরে রাখা যেতে পারে। অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলে অন্য বিদ্যালয়ের সাথে স্বমন্বয় করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই উপজেলার বাহিরে না হলেই ভাল হয়। এর ফলে সরকার আর্থিক ভাবে অনেক সাশ্রয় হবে । শিক্ষা খাতের আর্থিক অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে ।

প্রকৌশলী রিপন কুমার দাস,
কলাম লেখক ও ট্রেড ইন্সট্রাক্টর,
ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
পটুয়াখালী।
ripan.edu48@gmail.com

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)