বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণই হতে পারে সকল সমস্যার সমাধান
মোঃ আবুল হোসেন, নিজস্ব প্রতিনিধি ||
স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক আমরা। স্বাধীনতার পূর্ণ সুযোগ সুবিধা উপভোগ করা আমাদের ন্যায্য অধিকার। স্বাধীন দেশের প্রতিটি মানুষের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার কথা। নতুবা স্বাধীন দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হতে পারে। স্বাধীন দেশের পূর্ব শর্ত যেহেতু সবার সমান সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা। সকলের জীবন যাত্রার মানকে এক লেভেলে পরিচালিত করা। স্বাধীনতার পূর্ণ সুযোগ সুবিধা সবার নিকট পৌঁছে দেওয়া। সকলেরই আছে স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করার।
আজ বাংলাদেশে সকল পেশার মানুষ সমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলাদেশে বৈষম্যে জর্জরিত। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবার সমান সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা দুই ধারায় বিভক্ত। শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয় এক পাঠ্যক্রমে। একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এক গন্ডির মধ্যে। সবার জন্য একই আইন কানুন প্রয়োগ করা হয়। কার্যক্রম সবার জন্য সমান। পাঠ্যপুস্তুক এক এবং বিষয় বস্তু এক। শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা সমান। তবুও আজ ও শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরাট পার্থক্য বিরাজমান। শিক্ষা ব্যবস্থা এক লেভেল হওয়া জরুরি।
শিক্ষা ব্যবস্থায় পার্থক্য বিরাজমান থাকলে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হতে বাধ্য। শিক্ষক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। বর্তমান সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় চলছে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে অসন্তোষ। সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে আজ বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ জেগে উঠেছে। আজ বাংলাদেশে চলছে জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবার সুযোগ সুবিধা এক নয়। সরকারি এবং বেসরকারি এই দুই ধারায় বিভক্ত।
বৈষম্য গুলো হলো - বেতন, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের শিক্ষা ভাতা, হাউজ লোন, বদলি প্রথা, চাকরি শেষে নেই পেনশনের সুযোগ সুবিধা।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বর্তমানে আছে এককালীন অবসর ও কল্যান তহবিল নামে ১০০ মাসের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা। নেই অন্য কোনো বাড়তি সুযোগ সুবিধা। যা সরকারি শিক্ষকরা পূর্ণ সুযোগ সুবিধা পায়।
আমাদের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা স্বাধীনতার এত বছরে ও মনে হয় স্বাধীনতার প্রকৃত সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত শুধু অবহেলার কারণে। আমাদের নেই প্রকৃত অবিভাবক। আমাদের জীবন যাত্রার মান নিয়ে কেউ নেই দেখভাল করার। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ও আছে সুস্থ সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করার অধিকার। কিন্তু বর্তমান সময়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবন কাটে প্রতিটি মুহূর্ত হতাশার মধ্য দিয়ে। বর্তমান সময়ে প্রতিটি পেশায় জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবন যাত্রার মান নিম্নমুখী। বর্তমান সময়ে আয়ের চাইতে ব্যয় বেশি হচ্ছে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। বেশির ভাগ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়তি কোনো আয় উপার্জনের বিকল্প কোন উৎস নেই। জীবন যাপন করতে হয় সামান্য সরকারি অংশ দিয়ে। সরকারি অংশের সাথে বাড়ি ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা সহ যা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসারের ভরনপোষণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবনযাপনে নেই কোন বাড়তি ইনকাম। যা দিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে। তাইতো শিক্ষকদের পিছু টান বৃদ্ধি পায়। আর পিছুটান থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর তার প্রভাব পড়বে। অধিকাংশ শিক্ষক নিজ জেলার বাইরে চাকরি করে। বাইরে থাকার জন্য চাই বাড়ি ভাড়া। যে সামান্য বাড়ি ভাড়া সরকার বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দিচ্ছে তা দিয়ে বাংলাদেশের কোথাও বাড়ি ভাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসা ভাতা তো নাম মাত্র। মাত্র ৫০০ টাকা। যেখানে ডাক্তার ভিজিট ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা।
বিশ্বের কোন দেশে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। বর্তমান বিশ্বের সকল দেশেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষকরা সবচেয়ে সম্মানিত। দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি মর্যাদা। শিক্ষিত জাতি রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কথায় আছে, যে দেশ যত বেশি শিক্ষিত সে দেশ তত বেশি উন্নত। শিক্ষকরাই উন্নত দেশ গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সরকার, অবিভাবক এবং শিক্ষকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে শিক্ষিত জাতি। যা রাষ্ট্র কিংবা সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকরাই জাতি গঠনের নিপুণ কারিগরের দায়িত্ব পালন করে থাকে। আজ এই জাতি গঠনের কারিগর সিংহভাগ অবহেলিত।
এই অবস্থা বিরাজমান থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আসবে না পরিবর্তন। তাই সমগ্র বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় আনতে হবে আমুল পরিবর্তন। জাতীয়করণই হতে পারে সকল সমস্যার সমাধান। বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ হলে শিক্ষার শিক্ষার্থীরা পাবে লেখাপড়া করার সমান সুযোগ সুবিধা। শিক্ষা ব্যবস্থায় আসবে পরিবর্তন। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া রোধ হবে। শিক্ষার্থীরা সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। লেখাপড়ার আগ্রহ বেড়ে যাবে। দেশের মেরুদণ্ড হবে মজবুত। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হবে দেশ। উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাবে দেশ। দেশে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। বেকারত্ব কমে আসবে। দেশ হবে উন্নত। আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে এবং উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় দ্বিতীয়। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন এই বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে এক নম্বরে পৌঁছে যাবে। এই দিন বেশি দূরে নয়। শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য দূরীকরণ হলে দেশ হবে সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বারাই পূর্ণতা পাবে।
আমরা আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এক লেভেলে এনে জাতিকে প্রকৃত সোনার বাংলা উপহার দিবেন।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাশিস (কেন্দ্রীয় কমিটি)