মানুষের চামড়া পুড়ে লেগে আছে মসজিদের মেঝেতে
হঠাৎই বিস্ফোরণ। এতে মসজিদের ভেতর থাকা ৬ এসি, দুমড়ে মুচড়ে গেছে। সিলিং ফ্যানগুলো যেন কেউ হাত দিয়ে বাঁকা করে দিয়েছে। জানালার কাঁচ সব ভেঙে গেছে।
ভিতরে থাকা থাই গ্লাসগুলো ভেঙ চুরমার। মসজিদের মেঝের কোথাও কোথাও আহত মুসল্লিদের শরীরের চামড়া পুড়ে লেগে আছে। পুরো মসজিদের ভিতর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদ পরিদর্শনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
শুক্রবার রাত ৮টা ৩৮মিটিটে এশার নামাজ চলাকালে হঠাৎ বিকট শব্দে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটে।
কেঁপে উঠে মসজিদসহ আশেপাশের এলাকা। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভিতর থেকে ভেসে আসতে থাকে মানুষের কান্না, আর্তনাদ আর চিৎকারের আওয়াজ। আশপাশ এলাকা থেকে ছুটে যায় পাড়া প্রতিবেশীরা। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।
নিহত হয়েছেন তিনজন। এর মধ্যে আব্দুল আজিজ নামে একজন মারা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি হাসপাতাল থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ছুটে যাওয়া এলাকার যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব জানান, মসজিদের ভিতর প্রবেশ করে বিভৎস দৃশ্য দেখে আমার জ্ঞান হারানোর অবস্থা হয়। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। অন্তত অর্ধশত মুসল্লি কেউ মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আবার কেউ বা বাঁচার আর্তনাদ। সবার শরীর ঝলসে লাল চামড়া মাংস বের হয়ে গেছে। কাকে ছেড়ে কাকে উঠাবো বুঝতে পারছিলাম না। একে এক অন্তত ৪৫ জনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বের করেছি। কারো চেহারা চেনার উপায় নাই।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আমি শামীম ভাই আমি আজিজ। কিন্তু চেহারার চামড়া উঠে গেছে। কারো আঙ্গুল পুড়ে ছাই। এলাকার শত শত মানুষ এগিয়ে এসে সবাইকে হাসাপাতালে প্রেরণ করেন।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে মসজিদের খাদেম ফাহিম জানান, দীর্ঘদিন ধরেই মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া একটি গ্যাসের পাইপ দিয়ে গ্যাস লিকেজ হতো। গ্যাসের দুর্গন্ধে মসজিদ ভরে যেতো। রাতে মসজিদে খুব গ্যাসের তীব্র গন্ধ বের হচ্ছিল। নামাজের শেষ সময় বিস্ফোরণ ঘটল। কে কে আহত হয়েছে আমি কাউকে চিনতে পারছিলাম না। শুধু এতটুকু মনে আছে ইমাম আব্দুল মালেক, মুয়াজ্জিন, মসজিদের সেক্রেটারি শামীম, মুসল্লি আব্দুল আজিজকে চিনতে পেরেছি। তাদের পুরো শরীর চেহারা পুড়ে গেছে।
মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, মসজিদের মেঝেতে থেকে বুদবুদ করে গ্যাস বের হচ্ছে। মসজিদেও ভিতের জায়নামাজ পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিদর্শন করেছে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় জানান, পুরো মসজিদটি এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহীনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে সিআইডি কল করা হয়েছে। তারা আলমত সংগ্রহ করবে।
তিনি আরও জানান, আহতদের চিকিৎসা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিবি ওসি ও ডিআইওয়ানকে পাঠানো হয়েছে। সেখানে চিকিৎসায় সহযোগিতায় পুলিশের টিম কাজ করছে।