ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দল সাজাতে গিয়ে বিপাকে নির্বাচকরা
আগেই জানা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াডে একদম নতুন কারও অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা খুব কম। তার মানে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে যে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হচ্ছে, তাতে পুরনো ও পরীক্ষিত পারফরমার নিয়েই সাজানো হবে স্বাগতিকদের দল।
তবে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথায় আভাস মিলছে, ওয়ানডে সিরিজে ঠিকই দুই-একজন নবীণ সম্ভাবনাময় তরুণ ঢুকে পড়তে পারেন। এটুকু শুনে মনে হচ্ছিল, এবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে হোম সিরিজে টাইগারদের দল সাজানোর কাজটা বেশ সহজ হবে নির্বাচকদের।
কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দল সাজানোর কাজটা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে। দল সাজাতে গিয়ে রীতিমত বিপাকে দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আর হাবিবুল বাশার।
আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সাথে আলাপে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর স্বীকার করেন ঝামেলায় আছেন। তার নিজ মুখেরই কথা, ‘আর বলবেন না ভাই, দল সাজাতে গিয়ে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছি।’
ভাবছেন, দুটি মাত্র দল (ওয়ানডে আর টেস্ট), তা নির্বাচন করতে গিয়ে আবার কি সমস্যা? আগে কতবার টেস্ট, ওয়ানডের পাশপাশি টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডও নির্বাচন করতে হয়েছে। এবারতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ নেই, ফলে কাজ আরও সংক্ষিপ্ত ও সহজ হওয়ার কথা। জটিল কেন বলা হচ্ছে? কেনইবা এত কঠিন বলছেন?
প্রধান নির্বাচকের কথা, ‘হ্যাঁ, কঠিন। কঠিন এই কারণে যে, আমাদের দল সাজাতে হচ্ছে অনেক কিছু মাথায় রেখে। শুধু ফিটনেস, ফর্ম আর জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ সিরিজের পারফরম্যান্স বিচার-বিশ্লেষণই নয়, করোনাকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটও মাথায় আনতে হচ্ছে।’
বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নান্নু বলেন, ‘আমাদের ওয়ানডে আর টেস্ট স্কোয়াডের বাইরে ওয়ানডে আর চার দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের দলের কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। সেটাও সমস্যা ছিল না, যদি জৈব-সুরক্ষা বলয়ের বিষয়টা না থাকতো।’
‘আমরা আগে অনেকবারই টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মূল দলের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচের একাধিক দল এক সঙ্গে তৈরি করেছি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, তখন করোনা ছিল না। এখনকার মত ক্রিকেটারদের জৈব-সুরক্ষা বলয়ের ভেতরে রেখে তারপর মাঠে নামানোর বিষয় ছিল না। এখন আমাদের সবার আগে ভাবতে হচ্ছে-ওয়ানডে, টেস্ট আর দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য যাদেরকেই নির্বাচন করি না না কেন, তাদের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় রাখতে হবে। কারণ ওয়ানডে আর টেস্ট স্কোয়াডের পাশাপাশি প্রস্তুতি ম্যাচের ঐ দুই দলকেও শুরু থেকে জৈব সুরক্ষা বলয়ে রাখতে হবে।’
নান্নু যোগ করেন, ‘তাই আমাদের চার দলের সংখ্যাটা মাথায় রাখতে হচ্ছে বেশি করে। এখন ১৪ থেকে ১৬ জন করে নিয়ে গড়পড়তা ১৫ জনের স্কোয়াড সাজালে চার দলের খেলোয়াড় সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬০। কোচি-সাপোর্টিং স্টাফ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বহর মিলে এতজনকে জৈব-সুরক্ষা বলয়ে রাখা কঠিন হবে।’
প্রধান নির্বাচক বোঝানোর চেষ্টা করেন, এতজনকে একসঙ্গে জৈব-সুরক্ষা বলয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তার ভাষায়, ‘ওয়ানডে টেস্ট আর দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ মিলে চার দলের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫-৩৬ জনকে নির্বাচন করতে চাই আমরা। সেই কাজটি বেশ কঠিন। মানে আমাদের এমনভাবে খেলোয়াড় নির্বাচন করতে হচ্ছে, যাতে করে ৩৫-৩৬ জনকে দিয়ে ওয়ানডে-টেস্ট স্কোয়াডের পাশাপাশি প্রস্তুতি ম্যাচের দল দুটিও নির্বাচন করা যায়।’
নান্নু জানান, তারা টেস্ট এবং ওয়ানডের জন্য ২৪ জনের মত ক্রিকেটার নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। ওই বহরের সবাই যে ওয়ানডে আর টেস্ট স্কোয়াডে থাকবেন, এমন নয়। তাদের কেউ কেউ ওই ওয়ানডে আর চার দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের দলেও ঢুকে যাবেন। এর বাইরে হয়তো আরও ১০-১২ জন ক্রিকেটারকে নেয়া হবে। তারাও জৈব-সুরক্ষা বলয়েই থাকবেন। তাতে করে সংখ্যাটা হয়তো ৩৫-৩৬ জনের ভেতরে রাখা যাবে।’
এদিকে প্রধান নির্বাচক জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, তারা এখনও ক্রিকেটার নির্বাচনের কাজে হাত দেননি। ২২ ডিসেম্বর তিনি আর অপর নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বসে প্রাথমিক আলাপ আলোচনা করবেন।
এর মধ্যে হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, ফিজিও, চিকিৎসক, ট্রেনার ও টেস্ট-ওয়ানডে অধিনায়কের মতামতও নেয়া হবে। আর ২৪ থেকে ২৫ ডিসেম্বরের ভেতরে তারা দল চূড়ান্ত করে বোর্ডে জমা দেবেন। তবে নান্নুর শেষ কথা, ‘আমরা কিছুতেই ২০২০ সালে দল ঘোষণা করতে চাই না। ২০২১ সালের প্রথম দিন দল ঘোষণা হবে।’