নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে অনেক এমপি পালানোর দরজা পাবে না: সেতুমন্ত্রীর ভাই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছেন ফল, দুর্নীতিবাজরা গাছ এনে দিয়ে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌর নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা।
এসময় ফেনীতে উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে পুড়িয়ে হত্যা এবং সরকারি কর্মচারীদের নানা দুর্নীতিরও সমালোচনা করেন তিনি।
শুক্রবার (০৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসুরহাট পৌরসভার (৫, ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ড) মমিন ব্রাদার্সের বাড়ির দরজা, রামদী শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ ও হক মার্কেটের সামনে নির্বাচনী পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘নোয়াখালী-ফেনীর যে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি, জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে করোনার কারণে এখন দেখা করা সম্ভব নয়। এ কথাগুলো বলার মাধ্যমে আমি তাকে জানাচ্ছি, এ অপরাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিৎ। এখনও তিন বছর সময় আছে। এসময়ের মধ্যে এখানে যাতে একটা আমুল পরিবর্তন আসে। টেন্ডারবাজি, চাকরি বাণিজ্য, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ত্যাগী সব নেতাকে দলীয় পদে স্থান দিতে হবে। আমাদের নেতা মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন দুই পিরিয়ড উপজেলা চেয়ারম্যান, অথচ তিনি সরকারের সম্মানী ভাতা নেননি, সরকারি বাড়িতেও থাকেননি। এ সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতাকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বানানো হয়েছে।’
আবদুল কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, ভোটের অধিকার এখনও পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমি এ কথাগুলোই বলছি। বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে আমি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ কাজ শুরু করতে চাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারেন। তার সক্ষমতা ও যোগ্যতা আছে। জিয়া ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে। অবশ্য বিএনপি ১৯৯১ সালে নিরপেক্ষ নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছিল। এছাড়া তারা আর কোনো স্বচ্ছ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ১৯৯৬, ২০০৮ সালে ফেয়ার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো চামচা নেতা বলে, ওমুক নেতার কারণে নোয়াখালীতে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। আমি বলেছি, জনপ্রিয় ২ থেকে ৩ জন ছাড়া আগামীতে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমাদের অনেক এমপি পালিয়ে যাবার দরজাও খুঁজে পাবে না। আমার নাকের ডগায় দম থাকা পর্যন্ত এ কথাগুলো আমি বলে যাব। আমার দলের নেত্রী শেখ হাসিনার এগুলো জানা উচিৎ, দেখা উচিৎ। তিনি ছাড়া ভোট ডাকাতির সংস্কৃতির অবসান হবে না। তিনিই এর অবসান ঘটাতে পারবেন। শেখ হাসিনা উন্নয়নের জন্য আজ বিশ্ব রোল মডেল। তাঁর নেতৃত্বে কাজ করলে আগামী তিন বছর পর দেশে আর কোনো কাজ বাকি থাকবে না। তিনি একটি সুনির্দিষ্ট নীতি নৈতিকতার মধ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। মাদক ও নারীর সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে কোনো দলীয় পদ-পদবীতে রাখা যাবে না, নেত্রীর কাছে আমার অনুরোধ। চাকরিতে নিয়োগ করতে হলে ডোপ টেস্ট করে নিয়োগ এবং যারা চাকরি করছে তাদেরও ডোপ চেষ্টা করা উচিৎ। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করলে মাদকের অপব্যবহার অনেকটা রোধ হবে। রাজনীতিতেও শৃঙ্খলা আসবে।
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের বিচার হয়, এতে মানুষ খুশি। কিন্তু সরকারি আমলারা কি রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এদেরও বিচার করা উচিত। ভোট চুরি আর দুর্নীতি, মাদকের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন করা হোক।’
মির্জা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি এ বাঙালি জাতির জন্য ৩০ বছর আন্দোলন করেছেন, ১৪ বছর কারাগারে ছিলেন, ৩ বার ফাঁসির কাষ্ঠে গিয়ে বাঙালি জাতির জয়গান গেয়েছেন। সেই নেতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা যে যে দল করেন, শেখ হাসিনাকে অপছন্দ করেন, আওয়ামী লীগকেও অপছন্দ করেন সমস্যা নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করবেন, না হলে আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে বিশ্বে দরবারে পরিচিতি পাবো।
কাদের মির্জা আরও বলেন, আমাদের পোষ্টার মাইজদি ও ফেনীর ষড়যন্ত্রকারীরা ছিঁড়ে ফেলেছে। বিএনপি-জামায়াত আমার পোষ্টার ছিঁড়ে নাই। আমাকে সত্য কথাগুলো বলতে হবে, না বললে তারা সংশোধন হবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, এগুলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে হবে। শেখ হাসিনা সাহসী নেত্রী, ১৭ বার ওনাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আল্লাহ ওনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বিএনপি পিন্টুর মতো দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিচার করেনি, আমার নেত্রী শেখ হাসিনা নিজের দলের দুর্নীতিবাজদের বিচার করে দেশবাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন।
মির্জা বলেন, আমার নেতা ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় বলতে চাই যদি কাগজে লেখ নাম, সে নাম মুছে যাবে, পাথরে লেখ নাম, পাথর ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লেখ নাম, সে নাম রয়ে যাবে। আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আমার নাম আপনাদের হৃদয়ে লিখে রাখবেন এবং আমাকে ভোট দিবেন। সূত্রঃ সময় নিউজ