শিক্ষকদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণের প্রতিবাদ করছি
,মেধাবী ছাত্রী অরিত্রির মর্মান্তিক মৃত্যু কারোরই কাম্য হতে পারে না। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সম্পর্ক পিতামাতার সম্পর্কের চেয়েও বেশি কিছু। শিক্ষকগণ পরম মমতায় শিক্ষার্থীদের একজন ভালো মানুষ তৈরি করতেই আগ্রহী। অবুঝ শিক্ষার্থীদের ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক, তাই বলে শাসনের নামে দুঃশাসন কাম্য নয়’– ভিকারুননিসার ছাত্রী অরিত্রির অনাকাঙ্খিত আত্মহনন বেদনাদায়ক যা আমাদের পীড়িত করে।
পরীক্ষা পরিচালনায় দায়িত্বশীল শিক্ষকগণের কঠোর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না, তাই বলে ঢালাওভাবে শিক্ষক সমাজকে দোষারোপ গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষকগণ কখনো শিক্ষার্থীদের অমঙ্গল অধঃপতন কামনা করেন না। শিক্ষকগণ পিতৃ মাতৃস্নেহে তাদের সবটুকু আদর ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষরুপে গড়ে দিতে চেষ্টা করেন। মানবতার সেবায় ব্রতী একজন আদর্শ শিক্ষক কখনো প্রাপ্তির বিষয়ে ভাবেন না। তাইতো দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষকের বেতন-ভাতা একজন পিয়নের চেয়েও কম। এতদসত্ত্বেও মহান শিক্ষকগণ শিক্ষার মানোন্নয়নে আত্মনিয়োগ করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে।
অরিত্রির একটি দুঃখজনক ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে গোটা শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার কথা চিন্তা করলে তা নিঃসন্দেহে শিক্ষাব্যবস্থায় অমঙ্গল বয়ে আনবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ভিকারুননিসা স্কুলটি তিলে তিলে গড়ে উঠা একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ব্যতিক্রমী কিছু নিয়ম কানুন থাকবে এটাই স্বাভাবিক, তাইতো এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে হয় তীব্র প্রতিযোগীতা। আর এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম সুখ্যাতির পিছনে শিক্ষকদেরই অবদান অনস্বীকার্য।
মেধাবী শিক্ষার্থী অরিত্রি পরিক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, অভিভাবকে ডেকে আনেন এবং ঘটনার কথা জানিয়ে টিসি দিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। স্বীকার করতে হবে প্রধান শিক্ষক এক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করেছেন, এ-ও স্বীকার করতে হবে, শিক্ষক আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেনি। অরিত্রিকে শাসন না করে অভিভাবকদের ডেকে এনে প্রধান শিক্ষক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। অসদুপায় অবলম্বন করায়, প্রধান শিক্ষক কঠোরতা অবলম্বন করে অন্যায় করেছেন বৈকি।
যার বিচারে
(১) তিনজন শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্ত
(২) এমপিওভুক্তি বাতিল
(৩) আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে থানায় মামলা
(৪) গ্রেফতার এবং জেলহাজতে প্রেরণ।
অরিত্রির একটি মর্মস্পর্শী দুঃখজনক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের গোটা শিক্ষক সমাজের অবদানকে অস্বীকার, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বিভিন্ন টেলিভিশনে বক্তব্য বিবৃতি টকশোতে শিক্ষকদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণের জন্য জোরালো প্রতিবাদ করছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অদুর ভবিষ্যতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে এ দৃষ্টান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অনতিবিলম্বে জেলহাজতে পাঠানো প্রধান শিক্ষকের মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। ন্যায় বিচারের স্বার্থে নিরপেক্ষ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানাচ্ছি।
মো. সাইদুল হাসান সেলিম
সভাপতি, বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম
বাংলাদেশ।