নামাজ ও ইফতারের ছুটি না দেয়ায় ‘এস আলম’ গ্রুপের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ৫ আহত শতাধিক
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, এ সময় পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যায়। নিহতরা হলেন- শুভ (২৩), মো. রাহাত (২৪), আহমদ রেজা (১৯) ও রনি হোসেন (২২)। গুলিবিদ্ধ আরেক শ্রমিক হাবিবুল্লাহ (২৫)কে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও শতাধিক শ্রমিক, আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আরও ৬ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, স্থানীয়দের দাবি আরও বেশ কিছু শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে ।
১৭ এপ্রিল শনিবার সকাল ১১টার পর এ ঘটনা ঘটে।
আহত শ্রমিকরা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে জানিয়েছেন, দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনায় রয়েছে চীনা নাগরিকরা।
দীর্ঘদিন ধরে চীনাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মতবিরোধ চলছিল, এ নিয়ে গতকাল শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন, শনিবার সকাল ১১টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এসময় শ্রমিকদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে, একপর্যায়ে পুলিশ বন্দুকের গুলি করে, এসময় গুলিতে ঘটনাস্থলেই ৪ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন কয়েক শতাধিক শ্রমিক, আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ ৬ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে জানান, বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। ঐ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে চারজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন এবং অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন খান কে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানতে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, বাশখালীর গন্ডামারায় এস আলম এর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এর আগেও এমন সংঘর্ষ হয়েছে ও সাধারণ মানুষ এবং শ্রমিক নিহত, আহত হয়েছে, এ নিয়ে এস আলম গ্রুপের কোন তৎপরতা নেই ও উদাসীন মানসিকতা পোষণ করে বলে সাধারণ মানুষের দাবি।
শ্রমিকরা চায়নাদের কাছে বড্ড অসহায় বোধ করে, শ্রমিক হিসেবে, মানুষ হিসেবে এবং বাংলাদেশী হিসেবে তাদের বিন্দু পরিমাণ মূল্য নেই । চিকিৎসারত এক শ্রমিক তাদের সাথে বর্বরোচিত আচরণের কথা জানান যে, জুমা পড়ার সময় দেয় না চায়না নাগরিকরা, রোজা রেখে যারা কাজ করেন তাদের ইফতারের সময় দেয় না চীনারা,এমনকি রোজার মাসে ১০ ঘন্টা ডিউটি করায় চায়নারা, মাসিক ১দিনও ছুটি দেয় না,মাসের ১৬ তারিখে বেতন দেয় না চায়নারা, সঠিক পারিশ্রমিক দেয় না এ বিদেশিরা, অথচ দেশটা বিক্রি করে দিছে চায়নার কাছে, নির্যাতনের অন্ত নাই কিন্তু পুলিশ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে গুণ্ডার ভূমিকা পালন করছে আর দেশের লোকদের গুলি করে মারছে। এই হলো দেশের স্বাধীন সোনার বাংলাদেশের অবস্থা, এই হলো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সফল, এমন নরক যন্ত্রণার শেষ কোথায় ?
এমনই প্রশ্নছুড়ে দিয়ে আহত শ্রমিকরা বলছেন স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান “এস আলম” গ্রুপের সুনাম কোথায় নেই কিন্তু ব্যবসা আর বিদেশিদের মন রক্ষার স্বার্থে এত অনিয়ম ও মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে জেনেও একেবারে নিরব ভূমিকা পালন করছে এস আলম পরিবার।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে একাধিক বার এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও কাউকে পাওয়া যায়নি ।
এদিকে বিভিন্ন পেশাজীবি ও শ্রমিকদের সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপ ও প্রশাসনের আন্তরিকতায় যদি বিন্দু পরিমাণ অবহেলা দেখি তবে এর পরিনতি ভয়াবহ হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার “দি বাংলাদেশ টুডে” কে জানান তদন্ত হচ্ছে এবং ধারাবাহিক ভাবে এটার তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করা হবে, আমরা আশা করছি শ্রমিক ও মালিকগন আমাদের কে সার্বিক সহযোগিতা করবেন ।