শিক্ষা সংস্কারে কমিশন গঠন এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না রাখার প্রতিশ্রুতি ঐক্যফ্রন্টের
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে ১৪টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে দুটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে শিক্ষা এবং তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে। শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে শিক্ষা সংস্কারে কমিশন গঠন, শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ দ্বিগুন করা, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা বাতিল ও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আইন প্রণয়ন। আর কর্মসংসস্থান সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে কোন বয়সসীমা থাকবে না।
সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, ড. রেজা কিবরিয়াসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ইশতেহারের শিক্ষা সংক্রান্ত সাত নম্বর ধারায় যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো: কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরীব মেধাবীদের জন্য আসন সংরক্ষণ, ডাকসুসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল, দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তি চালু, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সরকারিভাবে শিক্ষা ব্যয় সুনির্দিষ্ট করে ফি নির্ধারণ, মেধা পাচার বন্ধে উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষ জনশক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট নিরসনে হল নির্মাণসহ পদক্ষেপ গ্রহণ ও হলের খাবারের মানোন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষনা ও পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ না দেয়া, প্রশ্নফাঁস বিরোধী সেল গঠন ও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কার্যকর আইন প্রণয়ন, পর্যায়ক্রমে সব বেসরকারি স্কুল সরকারিকরণ করা, ধসে পড়া শিক্ষার মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া, শিক্ষক প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নতুন ক্যাডার সার্ভিস চালু, শিক্ষার্থীদের ইংরেজির দক্ষতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, কর্মমূখী শিক্ষায় আগ্রহীদের বৃত্তি প্রদান, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কর্মমূখী শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ বর্তমানের ২ দশমিক ২৫ শতাংশের পরিবর্তে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ইউনেস্কো নির্দেশিত ৬ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
ইশতেহারের তরুণদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত ছয় নম্বর ধারায় যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো: পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে কোন বয়সসীমা থাকবে না, সরকারি চাকরিতে অনগ্রসর ও প্রতিবন্ধী ছাড়া অন্য কোন কোটা থাকবে না, ত্রিশোর্ধ শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকার-ভাতা চালুর লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা পরীক্ষা করে বাস্তবায়নের জন্য কমিশন গঠন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকারি সব শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হবে, জেলা ও উপজেলায় তরুণদের কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, প্রশাসনিক জটিলতা ও ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত বেসরকারি বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করা, সরকারি চাকরির সব পরীক্ষা পিএসসির নিয়ন্ত্রণে আনা ও বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেয়া, বেসরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন, দেশে ওয়ার্ক পারমিটবিহীন বিদেশিদের চাকরি বন্ধ করা ও বিদেশি চাকরিজীবীদের আয়কর বাধ্যতামূলক করা, সারাদেশে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু ও ফ্রিল্যান্সিং এর আয় দেশে আনতে পেপ্যাল সেবা দেশে আনা, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ জোরদার করা, খরচ কমানো ও চূড়ান্তভাবে মনোনীতদের নামমাত্র সুদে ঋণ প্রদান, পোলট্রি খামার স্থাপনে বিশেষ প্রণোদনা, উদ্যোক্তা তরুণদের কম সুদে ঋণ প্রদান, কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহ ভর্তূকী দেয়া, আফ্রিকা ও জাপানে কৃষিখাতে এদেশের তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কাজে লাগাতে পদক্ষেপ নেয়া, তরুণদের সরকারি উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত করা এবং অধিক কর্মসংস্থানের জন্য শ্রমঘন মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতকে উৎসাহিত করা ও প্রণোদনা দেয়া।