স্কুলে বোরকা পরা রিটের আদেশ ১৪ মার্চ
দেশের বিভিন্ন স্কুলে নিগ্রহের শিকার স্কুলছাত্রীদের বোরকা পরার অধিকার নিশ্চিতকরণে দায়ের করা রিটের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। রোববার (১০ মার্চ) শুরু হওয়া রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি ও আদেশের জন্য ১৪ মার্চ নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে রিটের ওপর আদেশ দেবেন।রোববার (১০ মার্চ) এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি করেন হাইকোর্টের বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ।
গত ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মুহম্মদ মাহবুব আলম এবং আবুল খায়ের মুহম্মদ আজিজুল্লাহ নামে দুই ব্যক্তির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহম্মদ আহাসান ও শেখ ওমর শরীফ এ রিট করেন।
বোরকা পরা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রীরা শিক্ষকদের নিগ্রহের শিকার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলছাত্রীদের বোরকা পরার অধিকার নিশ্চিতকরণে এ রিট দায়ের করা হয়।
এছাড়া রিটে দেশের স্কুলগুলোতে স্কুল ইউনিফর্মের ওপর দিয়ে বোরকা পরিধানে ছাত্রীদেরকে বাধা না দেয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রীদেরকে বোরকা পরিধানে বাধাদানকারী স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন জানানো হয়।
রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়।
আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ বলেন, এর আগে ছাত্রীদের বোরকা পরাকে কেন্দ্র করে তারা বিভিন্নভাবে নিগ্রহের শিকার হন। পরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমরা গত বছরের ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে একটি আইনি নোটিশ পাঠাই।
কিন্তু সে নোটিসের কোনো জবাব না পাওয়ায় আমরা হাইকোর্টে রিট দায়ের করি। এ রিটের ওপর আগামী ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেবেন বলেন তিনি।
রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশের বিভিন্ন স্কুলে বোরকা পরিধানকারী ছাত্রীরা নিগ্রহের শিকার হওয়ায় তারা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা থানার মাইজপাড়া মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী বোরকা পরায় তাকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করে তাকে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে দেননি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ কাশেম।
ওই ঘটনার পরদিন সেই ছাত্রীর মা বোরকা পরার অনুমতির জন্য গেলে প্রধান শিক্ষক মারমুখী আচরণ করে তাকেও বের দেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্কুলে সংঘটিত একই ধরনের আরও কিছু ঘটনা বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
রিটে আরও দাবি করা হয়, ইসলাম সম্মত পোশাক পরিধান করা সকল মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। স্কুল ইউনিফর্মের ওপর নিজের পছন্দমতো দ্বীনি পোশাক পরিধান করার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে। কেননা বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিককে যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার দেয়া হয়েছে এবং সংবিধানের ২ (ক) অনুচ্ছেদে দ্বীন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সুতরাং স্কুল ইউনিফর্মের পাশাপাশি বোরকা পরিধান করতে না দিয়ে স্কুলছাত্রীদের সাংবিধানিক অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মী হিসেবে রিট আবেদনকারীগণ এসব ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হয়েছেন।
সৌজন্যেঃ দৈনিক শিক্ষা