‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ প্রকল্পে গোড়াতেই গলদ

আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান,
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ১৪ মার্চ ২০১৯

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম

সরকারি কেনাকাটায় অনিয়ম বন্ধে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিটিএম) পরিবর্তে যথাসম্ভব উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (ওটিএম) অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর প্রকল্পের পরামর্শকও ওটিএম অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন। তারপরও আইসিটি প্রকল্পের শিক্ষা উপকরণ সরাসরি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি বিশেষ কোম্পানিকে সুবিধা দিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন প্রকল্প’-এর প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তাদের অনৈতিক তৎপরতার কারণে ক্রয় প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। নানা অভিযোগের কারণে দায়িত্ব পালনরত প্রকল্প কর্মকর্তাকে ওএসডি করে মন্ত্রণালয়। এরপরও প্রকল্প ও মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে সব ধরনের পণ্য ডিটিএম পদ্ধতিতে কেনার পায়তারা চলছে। দু-একটি প্রতিষ্ঠান ও কতিপয় অসাধু ব্যক্তির স্বার্থে নেয়া এই উদ্যোগ বাতিল করে ওটিএম পদ্ধতিতে কেনার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সংসদীয় কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ৩ হাজার ৩৪০টি হাই স্কুলে একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপনের জন্য ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, সাউন্ডবক্স, মডেম ইত্যাদি সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। যেখানে শিক্ষা উপকরণ কেনায় ডিপিএম পদ্ধতি অনুসরণ অর্থাৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরাসরি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধীতাকারী শিক্ষা উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল সার্ভিসেস এভি (বিডি) লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো. মুজিবুল হক জানান, দেশে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, সাউ­বক্স, মডেম উৎপাদনের কোন ব্যবস্থা নেই। সেক্ষেত্রে ডিটিএম পদ্ধতিতে ওই শিক্ষা উপকরণ কেনা হলে চায়না থেকে নন-ব্র্যান্ড পণ্য এনে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া ছাড়া কোন পথ থাকবে না। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিুমানের পণ্য পাবে এবং বিক্রয়োত্তর সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। তাই অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ওটিএম পদ্ধতিতে কেনার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এবিষয়ে আইসিটি প্রকল্পের পিডি প্রফেসর ড. আবদুস সবুর খান বলেন, সরকার চাইলে যে কোন পণ্য সরাসরি ক্রয় করতে পারে। শিক্ষা উপকরণ কেনার ক্ষেত্রেও ডিপিপি অনুসরণ করা হচ্ছে। এবিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে তিনি জানান।

সংসদীয় কমিটির সদস্য এম এ মতিন বলেন, সরকারি কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে সংসদীয় কমিটি। এক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগ নিয়ে কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রকল্পের কার্যক্রম রেগগুলেটর, সুপারভাইজ ও মনিটর করার জন্য প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তিনজন পরামর্শক নিয়োগের প্রকল্প দলিলে (ডিপিপি) তা নিয়োগ দেয়া হয়নি। পরে নানামুখী চাপের কারণে নিয়োগ দেয়া হলে তারা শিক্ষা উপকরণ কেনায় ওটিএম পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু ওই পরামর্শ উপেক্ষা করায় শিক্ষা উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিখিত ভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছে।

এদিকে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কাজ নিয়ে অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প পরিচালকসহ দুই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা অধীনস্থ কর্মকর্তাদের মতামত না নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটার নথি অনুমোদন করেছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার মাধ্যমে অনিয়ম করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ওই প্রকল্পে অনিয়ম ও দুনীতি সংক্রান্ত ১৩টি অভিযোগের মধ্যে ১২টির সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সৌজন্যেঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)