‘বিদ্যুৎমানব’ আয়নাল
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
একটু এদিক সেদিক হলেই মৃত্যু নিশ্চিত। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই আয়নালের। খালি হাতে বিদ্যুতের মেইন লাইন থেকে শত শত ভোল্টেজের বিদ্যুৎ শরীরে সঞ্চালিত করে খেলা দেখান তিনি।মা-বাবা আদর করে ছোটবেলা নাম রেখেছিলেন আয়নাল মিয়া। কিন্তু এলাকাবাসী তাকে চেনে ‘বিদ্যুৎমানব’ হিসেবে। বিদ্যুৎ নিয়ে ভয়ংকর সব খেলা দেখিয়ে এলাকাবাসীর কাছে তিনি এখন এই নামেই বেশি পরিচিত।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সদরের দোকানটোলা গ্রামের বাসিন্দা আয়নাল মিয়া। চার মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। অভাব অনটনে কোনো রকম জীবন চলে। আয়নালের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে এক সময় তিনি বুঝতে পারেন বিদ্যুতের স্পর্শে তার কোনো ক্ষতি হয় না। বর্তমানে টেস্টার কিংবা গ্লাভস ছাড়াই স্থানীয় বাসা বাড়িতে বিদ্যুতের কাজ করেন তিনি।
এছাড়া বিদ্যুতের তার ধরে নিজের শরীরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালানো ও ডিম সিদ্ধ করে দেখান তিনি। এমনকি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা ২২০ কিংবা ৪৪০ ভোল্টের মেইন লাইনের নেগেটিভ-পজেটিভ তারে দুই হাত দিয়ে ধরে বাতি জ্বালানোর মতো ভয়ঙ্কর কাজও করেন। অনেক দুর্ঘটনা থেকে নিজের কর্মগুণে বহু মানুষকেও বিপদমুক্ত করেছেন আয়নাল।
তার এই ভয়ংঙ্কর খেলা দেখে অবাক এলাবাসী। হবেনই না কেন, যে কাজ করা একেবারেই অসম্ভব, সে কাজ কিভাবে আয়নাল মিয়া করেন তা স্বচক্ষে দেখে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরা পর্যন্ত হতবাক।
প্রতিবেশী মোতাহের মিয়া বলেন, আয়নাল ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। ফলে তিনি এই অবাক শক্তির অধিকারী হয়েছেন। প্রায় সময়ই তিনি বিদ্যুতের মেইন লাইনে ধরে খেলা দেখান।
তার ব্যাপারে পিডিবির অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এমন চেষ্টা কেউ করলে নির্ঘাত মারা যাবে। আয়নাল মিয়াকে এসব কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে তার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।
বানিয়াচং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম প্রকৌলী আমজাদ হোসেন বলেন, আয়নাল মিয়ার ঘটনা বিরল। অতীতে একজনকে শুধুমাত্র এক ফেজে হাত দিয়ে শরীরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে টেস্টার জ্বালাতে দেখেছি। কিন্তু আয়নাল মিয়া দুই ফেজে ধরে নিজের শরীরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করেন, তাও আবার ২২০ ও ৪৪০ ভোল্টের মেইন লাইনে। এটা কিভাবে করে তা ভেবে পাই না।
তবে আয়নাল এখন আর চান না ঝুঁকিপূর্ণ এসব কর্মকাণ্ড করতে। কিন্তু ৮ জনের সংসার চালাতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। সহায়তা পেলে তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান। সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল