বখাটেদের উত্ত্যক্তে অতিষ্ঠ স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
স্কুলে যাওয়া-আসার পথে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শিমলা রানী দাসকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত ও অপমান করত দুই বখাটে রাজকুমার রবিদাস এবং রিপন মনিদাস। দরিদ্র বাবার মেয়ে শিমলা মুখ বুজে সহ্য করত সেসব। বাবা নিত্যানন্দ ঋষিদাস স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার বিচারও চেয়েছেন। এ কারণে ওই দুই বখাটে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে মন্দিরে পূজা চলাকালে অনেক লোকজনের সামনে শিমলাকে অপমান করে তারা। প্রকাশ্যে এই অপমানে বাড়ি ফিরে এসে সারারাত ঘুমাতে পারেনি শিমলা। শুক্রবার দুপুরে পোশাক কারখানার শ্রমিক মা ও জুতা সেলাইয়ের কারিগর বাবা কাজে চলে গেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে। মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের সাটিয়াবাড়ি এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দীঘিরপাড়ের নিত্যানন্দ ঋষিদাস পরিবার নিয়ে সাটিয়াবাড়ি এলাকার আনিসুর রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। পাশের বাজারে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি। স্ত্রী পোশাক কারখানার শ্রমিক। তার তিন সন্তানের মধ্যে শিমলা বড়। রাজেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রতিবেশী চন্দন বাবুর ছেলে রাজকুমার রবিদাস ও নৃপেন্দ্র চন্দ্র মনিদাসের ছেলে রিপন মনিদাস প্রায়ই শিমলাকে উত্ত্যক্ত করত। অন্য এক ছেলের নামে তাকে ডাকত। এসব অপমান সহ্য করেই স্কুলে যেত মেধাবী শিমলা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে স্থানীয় একটি মন্দিরে শিমলাকে অপবাদ দিয়ে অপমানজনক কথা বলে দুই বখাটে। পরদিন বাবা-মা কাজে চলে যাওয়ার পর অপমান আর সইতে না পেরে বসতঘরের সিলিংফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে সে।
শিমলার বাবা নিত্যানন্দ ঋষিদাস সমকালকে বলেন, ‘গরিব বলে স্থানীয়দের কাছে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার বিচার চেয়েও পাইনি। অপবাদ-অপমান ও উত্ত্যক্ত সহ্য করতে না পেরে মেয়ে আমার আত্মহত্যার পথ বেছে নিল।’
রাজেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আসকর বলেন, শিমলা খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। কম কথা বলত। এভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেওয়ার খবরে তিনি আহত হয়েছেন। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই মনটা খারাপ। দুই বখাটেকে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম জানান, কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শনিবার রাজকুমার ও রিপনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে নেমেছে। সুত্রঃ দৈনিক সমকাল