বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাঃ জাতীয়করণের হাতছানি
বহুদিন ধরে বেসরকারি শিক্ষকদের একটি প্রাণের দাবি- এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে জাতীয়করণ করা৷ এর সাথে শিক্ষক ফোরামের অনশনে সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল- ৫% বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা প্রদানের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছেন। সরকার বেসরকারি শিক্ষকদের ১০০% মুল বেতন স্কেল, ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া, ৫`শ টাকা চিকিৎসা ভাতা, ২৫% উৎসব ভাতা, সরকারি শিক্ষকদের ন্যায় ৫% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, বৈশাখী ভাতা এবং অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। গত ৮ নভেম্বর`১৮ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫% বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও ২০% বৈশাখী ভাতা ঘোষণা করেছেন৷ শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে অবশিষ্ট খুবই সামান্য। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম, দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নিয়ে জাতীয়করণ করা হলে, সরকারের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে না। অথচ কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মহলের বিরোধীতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সরকার একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছে না।
যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে, শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়ন জরুরি। মানসম্মত শিক্ষায় গুনগত ও মেধাবী শিক্ষককের ভূমিকা অপরিসীম। মানসম্মত শিক্ষা এবং দক্ষ মানবসম্পদ জাতীয় উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। মানসম্মত শিক্ষার প্রয়োজনে, শিক্ষকদের জীবন মানের উন্নয়ন আবশ্যক। দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ও অভুক্ত উদরে থেকে শ্রেনী কক্ষে মানসম্মত পাঠদান অসম্ভব। সেহেতু শিক্ষকতা পেশাকে মর্যাদাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় করে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হবে। তাই একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনে জাতীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষার নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা হবে একটি বৈপ্লবিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও সুদৃঢ়। দেশের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়নের ছোঁয়া আজ দৃশ্যমান। বিগত এক যুগের উন্নয়নে দেশের মানুষ আজ অভিভূত উদ্বেলিত। শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা নেই, আছে কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মহলের হীনমন্যতা। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ, দেশের বিপর্যস্ত শিক্ষার মানোন্নয়নে অনতিবিলম্বে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
পরিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারিদের বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা প্রদানের মাধ্যমে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দ্বার উন্মোচন করায়৷ অামরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অান্তরিকতার সাথে, সরকারের নিকট সঠিকভাবে উপস্থাপন করলে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে জাতীয়করণ করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে, জাতীয়করণে সরকারের যথেষ্ট সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা আছে বলেই আমারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি৷ দেশবাসী রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ মেধাবী কর্মকর্তাদের নিকট শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং জাতীয়করণে আরো অধিক কার্যকর অবদান রাখার প্রত্যাশা করি।
সাইদুল হাসান সেলিম, সভাপতি, বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম
(মতামতের ভাষা লেখকের নিজস্ব, এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিদিন.কম কর্তৃপক্ষ কোনভাবে দায়ী নয় )