মুছে যেতে বসেছে খুনিয়াদিঘী স্মৃতিসৌধ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
রাণীশংকৈল-কাঠালডাঙ্গী সড়কের পাশে রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদ হতে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত সাদা রং করা প্রাচীর বেষ্টিত একটি স্মৃতিসৌধ যেটি ১৯৭১ সালের নরকীয় হত্যাযজ্ঞের স্বাক্ষর বহন করেছে সেটি হলো খুনিয়াদিঘী স্মৃতিসৌধ। এই খুনিয়াদিঘী কি পারবে সেই ৭১ সালের মে মাস হতে শুরু হওয়া ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে খাঁন সেনারা ও তাদের দোসরদের সহযোগিতায় নরকীয় হত্যাযজ্ঞের স্বাক্ষর বহন করতে ? এমন অভিযোগ
মুক্তিযোদ্ধাসহ সুধিমহল ও এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার জন্য এর চারপাশে সীমানা প্রাচীরের ওপর লোহার গ্রিল দেওয়া রয়েছে। কিন্তু গ্রিলগুলোর অবস্থা একেবারে নাজেহাল, প্রাচীর জুড়ে যে কয়েকটি লোহার গ্রিল রয়েছে তাদের মাঝখানের লোহাগুলো নেই। যা নিরাপত্তার অভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে । চুরি হওয়ার ফলে এদিকে সৌন্দর্য এমনকি স্মৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে এই স্মৃতিসৌধের।এ ব্যাপারে যুদ্ধকালীন কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো:সিরাজুল ইসলাম বলেন, খুনিয়দিঘী স্মৃতিসৗেধের প্রাচীরের লোহার গ্রিলগুলো নিয়ে যাচ্ছে তাতে করে তিনি মনে করেন একেকজন মুক্তিযোদ্ধার পাঁজর ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান মুক্তিযোদ্ধারের জীবজদ্দশায় যদি আমরা এরকম দেখি তাহলে আমরা মারা গেলে মনে হয় এই স্মৃতিসৌধের চিহ্ন আর থাকবে না বলে তিনি মনে করেন । এ বিষয়ে আমি উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বীরমুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান বলেন, আমরা এই খুনিয়াদিঘিী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বছরে দুইবার যাই। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এই স্মৃতিসৌধ পাহাড়া দিতে পারিনা। এর রক্ষার দায়িত্ব একমাত্র উপজেলার প্রশাসনের। উপজেলা প্রশাসনের গাফলাতির কারণে এই স্মৃতিসৌধের চিহ্ন মুছে যেতে বসেছে। এই স্মৃতিসৌধের দিকে এখনই উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি দেওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন । “রাণীশংকৈলের মুক্তিযুদ্ধ” নামক বই হতে জানা যায় যে, খানসেনারা স্থানীয় পীস কমিটির তথ্য মোতাবেক এইখানে আনুমানিক প্রায় ৪ হাজার নিরীহ জনগণকে হত্যা করেছে। আশপাশের গ্রামের আওয়ামীলীগ ও স্বাধীনতা পক্ষের লোকজন ও পার্শ্ববর্তী থানা হরিপুরের গ্রাম হতেজনসাধারণকে ধরে এনে সেই খুনিয়াদিঘী পুকুরে গুলি ফেলে দেয় এবং কাজের সন্ধানে রাস্তায় চলা লোকদের ধরে এনে হত্যা করে এই পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। তখন এই খুনিয়াদিঘীর পানি রুপান্তরিত হয় খুনের পানিতে। পানি তার আসল রং হারিয়ে লাল বর্ণে থাকত সবসময়। দিনের বেলা কুকুর, শকুন আর রাতের বেলা শিয়ালেরা টেনে হিঁচড়ে খেত মৃতদের লাশ। সেই সময়ে পাকসেনাদের গুলিতে নিহত হওয়া শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে খুনিয়াদিঘীর পূর্ব পাড়ে নির্মিত হয়েছিল জরাজীর্ণ একটি স্মৃতিসৌধ।যা খুনিয়দিঘিী স্মৃতিসৌধ নামে পরিচিত।
খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই পুকুরটির নাম রাখা হয় খুনিয়াদিঘি। এটি উপজেলা চত্বর থেকে এক কিলোমিটার দুরে রাণীশংকৈল-কাঠালডাঙ্গী প্রধান সড়কের বুক চিরে কালের
স্বাক্ষী হয়ে বেহাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে গ্রিলের লোহাগুলো চুরির ঘটনা ঘটছে। তারা বলেন যুদ্ধের সময় যেসব নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই স্মৃতিসৌধ নিমার্ণ করা হয়েছিল। ঠিক যেন মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে এই স্মৃতিসৌধের স্মৃতি মুছে যেতে চলেছে। এই স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য রক্ষা করা এখনই দরকার ।এই স্মৃতিসৌধ রক্ষার ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ব্যাপারটি দেখতেছি।
শিক্ষা প্রতিদিন/ঠাকুরগাঁও।/গৌ.চ.ব