মানিকগঞ্জে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার
যৌনলিপ্সু এক শিক্ষকের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী। মানিকগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার চাষাভাদ্র গ্রামের সিএনজি চালকের মেয়ে লেখাপড়া করতো মানিকগঞ্জের দৌলতপুর পিএস উচ্চ বিদ্যালয়ে।
সোমবার সকালে মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়ার একদিন পর তার মা ও নানী রহস্যজনকভাবে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন। তবে রক্ষা পায়নি দৌলতপুর পিএস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম সেন্টু।
মেয়েটির বাবা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করলে পুলিশ মঙ্গলবার রাতে আটক করে বুধবার আদালতে পাঠিয়েছে। আর মেয়েটিকে নারী ও শিশু আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার জন্য আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নেয়া হয়েছে।
বুধবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে গাইনি ও শিশু বিভাগের একটি কক্ষে চিকিৎসাধীন আছে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর পিএস উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে প্রথমে কোনো কথা বলতে চায়নি। শুধু বলে- অনেক শ্বাসকষ্ট। তাই আমার মা ও নানী এখানে ভর্তি করেছেন। তারা কোথায় জানতে চাইলে উত্তর দেয় ভর্তি করার একদিন পরই আমাকে ফেলে তারা চলে গেছেন।
আসল ঘটনা কি জানতে চাইলে কেঁদে উঠে। বলে, সেন্টু স্যার আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আর তার সঙ্গে আমার মা ও নানী। মা ও নানীকে স্যার সব সময় টাকা দিতো আর তারা আমাকে বলতো স্যার যা বলে তা শুনতে।
বছর তিনেক আগে আমার বয়স যখন আরো কম ছিল তখন লেখাপড়া করানোর শর্তে মা আমাকে সেন্টু স্যারের বোনের বাসায় ঢাকায় কাজে দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে আমাকে লেখাপড়া করায়নি। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর বাসার লোকজন আমার সঙ্গে ভালো আচরণ না করায় আমি অনেক কান্নাকাটি করতাম। পরে আমার বাবা সেখান থেকে নিয়ে আসে। এনে আমাদের গ্রামের মোল্লাবাড়ি স্কুলে ভর্তি করে দেয়। সেখানে একটি ছেলে আমাকে পছন্দ করতো । কিন্তু আমার নানী বলতো যদি প্রেম করিস তবে বড় লোকের ছেলের সঙ্গে করবি। গেল জানুয়ারি মাসে পাশের উপজেলার দৌলতপুর পিএস উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য গেলাম। স্কুলের ফরম তুলে সেন্টু স্যারের বাসায় ফরম পূরণ করতে যাই। সেদিন স্যার আমাকে প্রথম দেখেন। পরে নানীর সঙ্গে তার কি কথা হয় জানি না। এরপর পরীক্ষা আসলে আমাকে আমার নানীর সঙ্গে তার বাড়িতে যেতে বলে পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু বলবে বলে। প্রথমদিনই স্যার আমার সঙ্গে এত খারাপ আচরণ করেছে যা কাউকে বলতে পারি নাই। আমার সব কিছু কেড়ে নেয়ার পর আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি। এরপর আমার নানী অনেক বার স্যারের বাসায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। একদিন রাতে আমার নানী আবারো সেন্টু স্যারের বাসায় নিয়ে যেতে চায়, তখন আমি নানীকে বলি আমি ওই বাসায় আর যামু না, তাহলে সে আবারো আমার সঙ্গে খারাপ কিছু করবে। স্কুলে যাওয়ার পর সেন্টু স্যার আমাকে সব সময় বলতো তার বাসায় যেতে। আমি ভয়ে যেতাম না। সেজন্য নানী ও মা দুজনে মিলে আমাকে মারধরও করতো। সেন্টু স্যার আমার নানী ও মাকে অনেক টাকাও দিতো। তারা বলতো স্যার যা বলবে তাই শুনবি। এ জন্য আমি আমার নানীর সঙ্গে কয়েক মাস কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। গেল ঈদের সময় আমার মা আমাকে বলে তোর নানীর কাছে কাপড় চোপড় চা, আর নানী বলেন- তুই সেন্টু স্যারের কাছে গিয়ে যা চাইবি সে তোকে তাই এনে দেবে। আমি তখন নানীকে বলি আমার আব্বা কিনে দিতে পারলে দিবে না হলে কারো কাছে চাইবো না। মা আমাকে বলে গরিবের মেয়ে হয়ে জন্মেছিস তাই আমরা যা বলুম তাই তোকে শুনতে হবে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই শিক্ষার্থী বলে, সেন্টু স্যার যেদিন আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিল সেদিন আমার বুকে প্রচণ্ড আঘাত পাই। সেই থেকে আমার শ্বাসকষ্ট হয়। এ ঘটনা আমার বাবাকে অনেক দিন পর জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেও তেমন কিছু বলেনি।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বুধবার সকালে সেন্টু স্যারের বোনের সঙ্গে আমার আব্বা কথা বলার পর পুলিশের কাছে আমাকে বলতে বলেছে সব মিথ্যা কথা, আমি ভয়ে এসব কথা বলেছি। কথার ফাঁকে ফাঁকে কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই ছাত্রী।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে আরো বলে আমার জীবনটা ওই সেন্টু স্যার আর আমার মা-নানী নষ্ট করে দিয়েছে। আমি আর কোনো দিন আমার বাবা- মায়ের কাছে যেতে চাই না। আপনারা আমাকে বাঁচান। আর আমি ওই সেন্টু স্যারের বিচার চাই।
রহস্যজনক বিষয় হচ্ছে মেয়েটিকে ভর্তি করার পরদিন তার মা ও নানী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছে। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ মেয়েটিকে বুধবার বিকালে তাদের জিম্মায় হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, বুধবার বিকালে শিক্ষার্থীকে হাসপাতাল থেকে পুলিশের জিম্মায় নিয়ে নারী ও শিশু আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার জন্য আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানার ওসি সুনীল কুমার সরকার বলেন, দৌলতপুর পিএস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম সেন্টুর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে মেয়েটির বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর মঙ্গলবার রাতে শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। বুধবার আটককৃত শিক্ষককে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে কোর্টে পাঠানো হয়েছে Sponsored by: Dainik Shiksha