বৈষম্যের চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে বেশিক জীবন
মোঃ আবুল হোসেন, নিজস্ব প্রতিনিধি
যে দেশ যত বেশি শিক্ষিত সে দেশ তত বেশি উন্নত। উন্নত দেশ বা শিক্ষিত জাতি এবং সমাজ গঠনে শিক্ষকরাই মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই শিক্ষকদের অবজ্ঞা করে উন্নত দেশ গঠন সম্ভব নয়। তাই শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আনতে হবে বৈষম্যহীনতা। বর্তমান সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বৈষম্য বৈষম্য খেলা শুরু হয়েছে তার অবসান কখন হবে তার কোন সঠিক পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত প্রতিয়মান হচ্ছে না। যেখানে একটি দেশের মানদণ্ড নির্ভর করে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর।শিক্ষা ব্যবস্থায় সমতায়ন প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য রেখে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা আশা করা যায় না। সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারি এবং বেসরকারি দুই ভাগে বিভক্ত।সরকারি এবং বেসরকারি এ দুইয়ের মধ্যে তফাৎ কি? যেখানে একই পাঠ্যক্রমে পাঠদান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় । পাঠ্য পুস্তকের বিষয় বস্তু এক। শিক্ষকের যোগ্যতা সমান। নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন সরকারের হাতে। যোগ্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে NTRCA বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে সরকারির চাইতে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা অগ্রগামী। তবু্ও বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা পড়ে আছে বৈষম্যের স্বীকার হয়ে। আজ বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাণহীন। যেখানে শিক্ষকরাই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাণ কেন্দ্র। শিক্ষকরাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে গড়ে তুলে শিক্ষিত জাতি। দেশের উন্নয়ন এবং জাতিকে দেখায় আলোর পথ। দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা এবং আজ যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তারা সকলেই এই শিক্ষকদের দ্বারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। তবুও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা রয়ে গেল অবহেলায়। শিক্ষক অবহেলিত মানে জাতি অবহেলিত।
আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। কিন্তু আমরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ এখনো পেলাম না। যেখানে স্বাধীনতার পূর্ব শর্ত সকলের সমান সুযোগ সুবিধা পাওয়ার। সকলে ভোগ করবে সমান সুযোগ সুবিধা। কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত কেউ বৈষম্য দূরীকরণে কোন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। স্বাধীনতার পর কেউ কোন দিন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ সুযোগ সুবিধা নিয়ে ভাবেননি। আজও রয়ে গেল বৈষম্যের স্বীকার হয়ে। বৈষম্য দূরীকরণে চাই বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকরাই জাতি গড়ার নিপুণ কারিগর।তাই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত এই বেসরকারি শিক্ষক সমাজ । বাঙালি জাতির পরিবর্তন হয়েছে।দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে। আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় দ্বিতীয়। কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কোন পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন কিছুই হলো না। রয়েই গেল এনালগ যুগে। ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া পেল না। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবনযাপনে উন্নয়নের ছোয়া আজও পড়ল না। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাগ্যের চাকায় ধরেছে জং। আজও সেই আদিম যুগেই রয়ে গেল বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এখনো বে - শব্দটি থেকে মুক্তি পেলাম না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
নিচে বৈষম্য গুলো তুলে ধরা হলোঃ-
স্বাধীনতার পর উৎসব ভাতার প্রচলন হয় ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে মূল স্কেলের ২৫ শতাংশ দিয়ে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতাই রয়ে গেল। হলো না কোন পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন। সরকারি শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পায় মূল স্কেলের ৪০-৬০ শতাংশ । অপরদিকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ছিল ১০০ টাকা ছিল দীর্ঘদিন। এই বাড়ি ভাড়া বর্তমানে করা হয়েছে ১০০০ টাকা। বর্তমান সময়ে বাড়ি ভাড়া গ্রামাঞ্চলে যেখানে সর্বনিম্ন ৪০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০০০ টাকা পর্যন্ত। শহরাঞ্চলের বাড়ি ভাড়া সর্বনিম্ন ৮০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকার ও বেশি। সেক্ষেত্রে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই সামান্য বেতনের টাকা দিয়ে জীবনযাপনই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পরিবারের ভরণপোষণ করতে হিমসিম খাচ্ছে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অভাব অনটন সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
আর সংসারের ভরনপোষণ করার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাকি টাকা জোগাড় করবে কীভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা একটু ভাবুন সুধি সমাজ। চিকিৎসা ভাতা ১৫০ টাকা থেকে বর্তমানে করা হয়েছে ৫০০ টাকা। আর সরকারি যারা তারা পায় ১৫০০ টাকা।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই ৫০০ টাকায় কীভাবে চিকিৎসা করাবে?যেখানে ডাক্তারদের সর্বনিম্ন ফি ৫০০ টাকা। বাকি টাকা কোথায় পাবে? পেনশনের ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু অবসর ও কল্যাণ তহবিল নামে ১০০ মাসের বেতনের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা।
নেই কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আর সরকারি চাকরি যারা করেন তারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাতা পায়। আর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তা থেকে ও বঞ্চিত। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনা অতীব জরুরি। নেই সন্তানের শিক্ষা ভাতা। বর্তমান সরকার বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দিচ্ছে মূল স্কেলের। কিন্তু এই ইনক্রিমেন্ট থেকে অবসর ও কল্যান তহবিলের আয় বৃদ্ধি করার জন্য ৪ শতাংশ হারে কর্তন করা হচ্ছে । পূর্বে নেওয়া হত মূল স্কেলের ৬ শতাংশ হারে কর্তন করে। বর্তমানে তা দাড়িয়েছে সর্বমোট ১০ শতাংশ। অবসর ও কল্যাণ তহবিলের আয় বাড়ানোর নামে বর্তমানে মুল স্কেলের ১০ শতাংশ হারে কর্তন করা হয়। এই কর্তনের ও বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। সেই পূর্বের ন্যায় সুযোগ সুবিধা বহাল আছে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নেই বদলি সিস্টেম আজীবন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে অবসরে যেতে হয় । যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থায় বদলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা থেকে ও বঞ্চিত বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
অন্য কোনো পেশায় এমন ঈদ বোনাস লক্ষণীয় নয়। সকল পেশার চাকরি জীবিরা পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস পায়। শুধু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তা থেকে ও বঞ্চিত।
শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্যের কারণে বর্তমানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিক্ষক সংগঠন গুলো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই শিক্ষক অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাণ সঞ্চার করতে বৈষম্য দূরীকরণ একান্ত জরুরি।
সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান চাই। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, বদলি, পেনশন সরকারি ন্যায় করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ এই যে, দেশের উন্নয়নের ধারায় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সংযুক্ত করে বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিলে শিক্ষক সমাজ আপনার প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।
আশা করি আপনি বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিবেন।
মোঃ আবুল হোসেন
সিনিয়র যুগ্ম- মহাসচিব
বাশিস (নজরুল)
কেন্দ্রীয় কমিটি।