আইবিএস রোগীর চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি

শিক্ষা প্রতিদিন ডেস্ক
শিক্ষা প্রতিদিন ডেস্ক,
প্রকাশিত: ০৭:৫২ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৯

প্রতীকী ছবি
শিক্ষা প্রতিদিন ডেস্ক ||
আই বি এস হলো মানবদেহের একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা যা পেটে ব্যথা ( এবডোমিনাল পেইন ) এবং ঘন ঘন পায়খানায় ( টয়লেটে ) ছুটে যাওয়ার ইচ্ছার মাধ্যমে প্রকাশ পায় । এটি একটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ইন্টেস্টাইন রোগ ( ভাওয়েল ডিজিজ ) । অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এ রোগটির লক্ষণ অল্প অল্প দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে । এটির প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হলো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বিশৃঙ্খলা । পেটের নিম্নভাগ হালকা ব্যথা ( ডিসকম্পোর্ট ) সহ ঘন ঘন মল ( স্টুল ) বের করে দেওয়ার প্রবণতা । বিভিন্ন সময়ে মলের পরিমাণও ঘনত্ব বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে । কখনও কোষ্টবদ্ধ ( শক্তমল ) আবার কখনও উদরাময় ( নরম মল বা পানির মত তরল মল ) । অনেক সময় মল বের হওয়ার আগে কিংবা পরে যথেষ্ট পরিমাণ মিউকাস ক্ষরণ হয়ে থাকে । মলদ্বারে অস্বস্থিবোধ ।এই রোগে পেট অধিকতর স্পর্শকাতর হয় বলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে । পাশ্চাত্যে প্রতি ১০০ জনে অন্তত ১০-১৫ জন এই রোগে ভুগে ।এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ২০ জন ও প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ২৭ জন এ রোগে আক্রান্ত ।

আই বি এস-এর প্রকারভেদ :

যে সমস্ত লক্ষণ খুব ঘন ঘন দেখা দেয় তার ভিত্তিতে এ রোগটি নিম্নরূপে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়

১. স্প্যাসটিক কোলন : পেটে ব্যথা এবং কোষ্টবদ্ধতা এটির প্রধান বৈশিষ্ট্য । সাধারণত পেটের বামপাশে অস্বস্থি থাকে এবং টয়লেট সেরে নেয়ার পর কিছুটা শান্তি পাওয়া যায় । এ ক্ষেত্রে অনেক সময় কোষ্টবদ্ধতার পর উদরাময় দেখা যেতে পারে ।
২. ফান্‌কসান্যাল ডায়রিয়া : ঘন ঘন উদরাময় হওয়ার প্রবণতা । তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুব ভোর বেলায় ঘুম থেকে জেগে উঠার পরপরই পায়খানায় ছুটে যেতে হয় । পাতলা পানির মত মল তরল হতে পারে । এক্ষেত্রে রোগী দীর্ঘ সময় পর্যন্ত টয়লেট রুমে যাতায়াত করে থাকে ।
৩. ফোরগাট ডিসমোটিলিটি : পেটে প্রচণ্ড গ্যাস হওয়া এবং খাবার গ্রহণের পরে পেটে অস্বস্থিবোধ । প্রায়ই পেট ফেঁপে আকারে বড় হয়ে থাকে এবং ডানপাশে ব্যথা হয়।
বআই বি এস কি কি কারণে হয়ে থাকে :

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও এ রোগ এর প্রাইমারি বা প্রাথমিক কারণ খুঁজে পায়নি । তবে সেকেণ্ডারি অনেক বিষয় এ রোগ জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী বলে গবেষণায় পাওয়া যায় । এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় সাধারণ মানুষের জানা থাকা দরকার । সেটি হলো মানবদেহের নার্ভ সিগন্যাল ও হরমোন ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টেস্টাইন ও ব্রেইন এর মধ্যে গভীর সংযোগ বিদ্যমান । উক্ত সিগন্যালগুলো বাউয়েল ফানকসান ও লক্ষণ সমূহকে প্রভাবিত করে । মানুষ যখন প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকে তখন নার্ভগুলো অত্যন্ত একটিভ বা কর্মোদীপ্ত হয়ে যায় ফলে ইন্টেস্টাইন বা অন্ত্রসমূহ সংবেদনশীল হয়ে পড়ে । এ রোগের উল্লেখযোগ্য সেকেণ্ডারী কারণসমূহ উপস্থাপন করা হলো:
১. মানসিক চাপ
২. বিভিন্ন খাদ্য হজম না হওয়া/এলার্জি
৩. খাদ্যাভ্যাস হঠাৎ পরিবর্তন করা ( অতিরিক্ত গরম কিংবা ঠাণ্ডা খাবার গ্রহণ
৪. অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ না করা ।
৫. দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখা এবং গ্যাসে পরিপূর্ণ হওয়া ।
৬. পরিমিত ঘুম না হওয়া ।
৭. পর্যাপ্ত পানি পান না করা ।
৮. হঠাৎ বড় কোন মানসিক আঘাত বা ভয় বা শোক পাওয়া ।
৯. নার্ভাস সিস্টেম এর দুর্বলতা
১০. ভীষণ ক্রোধ এবং উদ্বেগ ।
১১. কোলন বা মলাশয়ের মধ্যে অস্বাভাবিক গাঁজন প্রক্রিয়া ।
১২. অতিরিক্ত এলোপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার, যেমনণ্ড এন্টিবায়োটিক, এন্টিডিপ্রেসেন্ট ( বিষন্নতার জন্য ), সরবিটল ( ফলজাত চিনি যা দিয়ে সিরাপ জাতীয় ঔষধ তৈরি হয় )
১৩. মাসিক ঋতু চলাকালীন হরমোনাল পরিবর্তন হওয়া ।

আই বি এস-এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণসমূহ :

এ রোগের লক্ষণসমূহ সব মানুষের ক্ষেত্রে একই হয় না । লক্ষণসমূহ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে । কখন হালকা আবার কখনও কঠিন ভাবে প্রকাশ পায় । তবে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে লক্ষণসমূহ খুবই হালকাভাবে প্রকাশিত হয় । নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো যদি তিন মাস সময়ের মধ্যে প্রতি মাসে কমপক্ষে তিন দিন দেখা যায় তাহলে চিকিৎসকগণ আই, বি, এস বলে থাকেন।

উল্লেখযোগ্য লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ:

১. পেটে ব্যথা হওয়া ও টয়লেট সেরে নেয়ার পর ব্যথা হ্রাস পাওয়া ।
২. প্রতিনিয়ত গ্যাস হওয়া এবং পেটের মধ্যে কলকল শব্দ হওয়া ।
৩. হজমের গোলোযোগ, কোষ্টবদ্ধতা ও পর্যায়ক্রমে উদরাময় ।
৪. পেটে ফাঁপা, গলায় জ্বালা অনুভব ও বমি বমি ভাব ।
৫. ঘন ঘন মলদ্বার দিয়ে গ্যাস বের হওয়া কিংবা ঢেকুর তোলা ।
৬. ঘন ঘন পাতলা মল কিংবা পানির মত তরল উদরাময় ।
৭. পায়খানায় যাওয়ার বেগ সামলাতে না পারা এবং মলদ্বারে ব্যথা ।
৮. কোষ্টবদ্ধ অবস্থায় মলের বেগ না আসা কিংবা খুবই শক্তমল কষ্টে অল্প অল্প বের হওয়া।
৯. ক্ষুধা মন্দ হওয়া বা মোটেই না থাকা । আবার কখনও অতিরিক্ত ক্ষুধা থাকা ।
১০. প্রতিবার মলত্যাগের আগে বা পরে এবং মলের সঙ্গে মিউকাস ক্ষরণ ।
১১. ওজন হ্রাস পাওয়া ।
১২. মানসিক বিশৃঙ্খলা ( যেমন- খিটখিটে মেজাজ, উত্তেজনা, অবসাদ ও উদ্বিগ্নতা ) ।
১৩. কখনও কখনও যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ।
১৪. প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা, মস্তিষ্ক ক্লান্তি ও কাজের প্রতি অমনোযোগিতা ।
হোমিওপ্যাথি এমন একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা যা কখনও রোগের চিকিৎসা করে না, শুধুমাত্র রোগীর চিকিৎসা করে থাকে । দৈহিক ও মানসিক অবস্থায় ফিরে যায় এবং সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে । হোমিওপ্যাথি মানবদেহে সুষ্ঠুভাবে মেটাবলিজম বা রাসায়নিক পরিবর্তন ক্রিয়া সুসম্পন্ন করে ফলে ডিজেনারেটিভ জটিলতা বাধা প্রাপ্ত হয়
হোমিওসমাধানঃরোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয় অভিজ্ঞ চিকিৎসক ঘন যেই সব মেডিসিন প্রাথমিক ভাবে ব্যবহার করে থাকে, মার্ক সল,মার্ক কর, আর্জেন্ট নাইট, এসেফোয়েটিডা, কলোসিন্থ, লিলিয়াম টাইগ্রিনাম, লাইকোপোডিয়ম, নেট্রাম কার্ব, নাক্সভম, পডোফাইলাম, সালফার, এলোসকোট্রিনা, পালসেটিলা, ফসফরাস, সাইলেসিয়া, থুজা সহ আরো অনেক ঔষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে।

লেখকঃ
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
কো- চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)