বিকাশ-রকেটের টাকা তোলার খরচ কমানোর কৌশল!
মোবাইল নম্বরই হয়ে গেছে এখন মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব। এই সেবায় খরচ বেশি, তা এখন সবার মুখে মুখে। তবে টাকা তুলতে খরচ কমানোর কৌশল আছে। শহুরে গ্রাহকেরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। আর তা হলো
এজেন্টের পরিবর্তে এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন। এ জন্য আলাদা কোনো নিবন্ধনও লাগছে না। আর এ দোকান ২৪ ঘণ্টাই খোলা। এতে আপনার খরচ অর্ধেক পর্যন্ত কমে আসতে পারে। আপাতত বিকাশ, রকেট এবং উপায়-এর গ্রাহকেরা এই সুযোগ পাচ্ছেন।
দেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দেওয়া শুরু হয় ২০১১ সালে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে নিবন্ধিত ১৫টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিচ্ছে, তবে এটিএমের সুযোগ দিচ্ছে কেবল এই তিনটি। ডাক বিভাগের সেবা নগদ এই সুবিধা দিতে পারছে না, কারণ এটি কোনো ব্যাংকের সেবা না। তবে নগদে টাকা তোলার খরচ অন্যদের চেয়ে কিছুটা কম।
খরচ বাঁচাতে বিকাশ-রকেট–উপায়ের টাকা তুলুন এটিএম থেকে কত খরচ, বাঁচবে কত বিকাশ ও রকেট গ্রাহকদের এজেন্ট থেকে ১০০০ টাকা তুলতে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হয়। হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই টাকা কেটে নেওয়া হয়।
তবে অনেক গ্রাহক আলাদা করে ২০ টাকা পরিশোধ করেন। এজেন্টরাও দেড় টাকা ফেরত দিতে পারেন না। তাই প্রতি হাজারে দেড় টাকা বাড়তি খরচ পড়ে যায়। তবে বেশি টাকা উত্তোলনে বাড়তি খরচ কম হয়।
বিকাশ গ্রাহকেরা যদি এটিএম থেকে টাকা তোলেন, তাহলে প্রতি হাজারে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা খরচ হচ্ছে। এতে নগদ লেনদেন হয় না, ফলে বাড়তি খরচও নেই। বিকাশ গ্রাহকেরা ৮ ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে পারছেন।
রকেটের গ্রাহকদের এটিএম থেকে টাকা তুলতে প্রতি হাজারে লাগে ৯ টাকা। অর্থাৎ খরচ পুরো অর্ধেক। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে একই খরচে টাকা তোলা যায়।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘উপায়’ গ্রাহকেরা তাঁদের ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারছেন। তাঁদের এজেন্ট থেকে টাকা তুলতে প্রতি হাজারে খরচ হচ্ছে ১৪ টাকা। আর এটিএম থেকে ৮ টাকা।
বিকাশের জন্য আছে ৮টি ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তোলার সুযোগ। রকেট ও উপায়-এর একটি করে।
কোন সেবায় কোন এটিএম
বিকাশ: ব্র্যাক, বেসিক, ফাস্ট সিকিউরিটি, আইএফআইসি, যমুনা, মিডল্যান্ড, শাহজালাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সব এটিএম
রকেট: ডাচ্-বাংলার সব এটিএম ও শাখা
উপায়: ইউসিবির সব এটিএম
কীভাবে টাকা তুলবেন এটিএম থেকে
এটিএম থেকে টাকা তুলতে বিকাশ, রকেট ও উপায় গ্রাহকদের আলাদা করে কোনো নিবন্ধন করতে হচ্ছে না। তবে প্রতিটি লেনদেনের সময় আপনার নির্ধারিত মোবাইল ফোনটি সঙ্গে নিতে হবে।
রকেটের গ্রাহকেরা শুধু ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সব শাখা ও এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারছেন। তবে সারা দেশে এই একটি ব্যাংকেরই এটিএম রয়েছে ৪ হাজার ৭৭১টি আর শাখা আছে ২১০টি।
কারণ টাকা তোলার আগে গ্রাহক পরিচিতি নিশ্চিত হতে ওই মোবাইলে আসবে একবার ব্যবহারযোগ্য পাসওয়ার্ড। এরপরই বুথ থেকে টাকা তোলা যাবে।
বিকাশ এই সেবাটি শুরু করেছিল ব্র্যাক ব্যাংকের ৩৫০টি এটিএম বুথ দিয়ে। এখন ৮ ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ৩০০ এটিএম বুথ থেকে বিকাশের টাকা তোলা যায়। বিকাশের অ্যাপে কাছের এটিএমগুলোর খোঁজ মেলে।
রকেটের গ্রাহকেরা শুধু ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সব শাখা ও এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারছেন। তবে সারা দেশে এই একটি ব্যাংকেরই এটিএম রয়েছে ৪ হাজার ৭৭১টি আর শাখা আছে ২১০টি।
একইভাবে নবাগত উপায়ের গ্রাহকদের জন্য রয়েছে ইউসিবিএলের ৫৬৩টি এটিএম বুথ।
সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলে দেশজুড়ে এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ১০ কোটিরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এপ্রিল মাসে তাঁরা ৬৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছেন। দিনপ্রতি গড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
কার লেনদেন কত
সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলে দেশজুড়ে এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ১০ কোটিরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এপ্রিল মাসে তাঁরা ৬৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছেন। দিনপ্রতি গড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
মোট গ্রাহকের অর্ধেকেরও বেশি বিকাশের, সংখ্যায় তাঁরা ৫ কোটির বেশি। বিকাশের দৈনিক লেনদেন গড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এর মাত্র ৪০ কোটি টাকা তোলা হচ্ছে এটিএম থেকে।
তবে এটা বাড়ছে। বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, কাছের এটিএম খুঁজে নিতে বিকাশ অ্যাপে বাড়তি সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।
অন্য কর্তাব্যক্তিরা বললেন, এটিএম থেকে টাকা তুলছেন মূলত তরুণেরা।
প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা হিসাবে রকেটে মাসে লেনদেন হয় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এটিএম থেকে তোলা হচ্ছে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এখন রকেটের গ্রাহক ২ কোটি ৪০ লাখ।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের আগে ইউক্যাশ নামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালাত। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন নতুনভাবে চালু হওয়া ‘উপায়’ সেবায় ১০ লাখ গ্রাহক ও ৫০ হাজারের বেশি এজেন্ট রয়েছেন। এটিএম থেকে টাকা তোলার হিসাব পাওয়া যায়নি।
এসব সেবার খরচ নিয়ে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে কথা হয় রিকশাচালক মুজিবর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ টাকা জমলেই বাড়িতে পাঠাই। হাজারে ২০ টাকা খরচ করে বউ টাকা তুলে। তাঁর এটিএম কার্ডও নেই, এলাকায় এটিএম যন্ত্রও নেই।’
মুজিবরের মতো রিকশাচালকের জানাতে হবে, বিকাশ রকেট ও উপায়ের টাকা তুলতে কার্ড লাগে না। সবাইকে কম খরচে টাকা তোলার সুযোগ পৌঁছে দিতে এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।