লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডে কে এই ভারতীয় নারী!
সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডে নিয়মবর্হিভূতভাবে এক ভারতীয় নারীকে সদস্য হিসেবে রাখার প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ওই ভারতীয় নাগরিক ও নাবালক একজনকে বাদ দিয়ে নতুন করে ট্রাস্ট্রি বোর্ড গঠনের জন্য রোববার (১২ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি প্রদান করেছে ইউজিসি।
ইউজিসির পরিচালক মো. ওমর ফারুখ স্বাক্ষরিত ওই চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মওলা।
ট্রাস্টি বোর্ডে থাকা ওই ভারতীয় নাগরিক হলেন সাদিকা জান্নাত চৌধুরী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলীর ছেলে সৈয়দ আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী। সাদিকা জান্নাত চৌধুরী ভারতের আসাম প্রদেশের কাছার জেলার সোনাইমুখ তোলাগ্রামের শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও রত্না চৌধুরীর মেয়ে।
জানা যায়, শিল্পপতি রাগীব আলীর ছেলে সৈয়দ আব্দুল হাই প্রথম স্ত্রীর স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদের পর ভারতীয় নাগরিক সাদিকাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শ্বশুরের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি লিডিং ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য হন সাদিকা। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সিলেট সদর রেজিস্ট্রি অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনের সময় তার ঠিকানা মালনীছড়া চা-বাগান উল্লেখ করা হয়। যদিও দলিলে শ্বশুর রাগীব আলী ও স্বামী আব্দুল হাইয়ের ঢাকার গুলশান-২-এর ৭৬ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাসার ঠিকানা দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশি নাগরিকের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে সাদিকার শ্বশুর বা স্বামীর ঠিকানা ব্যবহার করা হয়নি। পরিচয় গোপন করার জন্য অবৈধভাবে তৈরি করা জন্মনিবন্ধনে ব্যবহৃত মালনীছড়া চা-বাগানের ঠিকানা দেওয়া হয়।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডকে অবৈধ দাবি করে ও লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা ইউজিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাদিকা জান্নাত চৌধুরী (পাসপোর্ট নং K 3920850) ভারতের নাগরিক বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান রাগিব আলীও উপাচার্যের বিরুদ্ধে ইউজিসিতে অভিযোগ দেন।
অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করতে ড. কাজী আবু তাহেরের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি ইউজিসির তদন্ত কমিটি গত ২৭ জুলাই ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। এসময় তারা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রাগীব আলী, উপচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা ও ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকর সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন।
তদন্ত শেষে ১২ নভেম্বর ইউজিসির পরিচালক মো. ওমর ফারুক বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি প্রদান করেন।
সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের বহিস্কৃত দুই শিক্ষককে পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেই সাথে ট্রাস্টিবোর্ড থেকে ভারতীয় নাগরিকসহ দুজনকে ২ মাসের মধ্যে বাদ দিয়ে নতুন করে বোর্ড গঠনেরও নির্দেশনা দিয়েছে।
১২ নভেম্বর ইউজিসির পরিচালক মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
চিঠিতে ভারতীয় নাগরিক সাদিকা জান্নাত চৌধুরী ও নাবালক সাইদ আজমাইন আবদুল হাই-কে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থেকে বাদ দিয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ও আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনিরীক্ষিত অর্থ বছর-এর নিরীক্ষা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
জানা যায়, কোম্পানি আইনের নিয়মে যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বোর্ডের নিবন্ধন না করায় দীর্ঘ ১৬ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
২০০৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতির মেয়াদ শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ধারা ৯ অনুযায়ী সরকারি সনদ গ্রহণ করা হয়নি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি বহিস্কার প্রসঙ্গে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে লিডিং ইউনিভার্সিটি’র বিভিন্ন অনিয়ম এবং বিশ্ববদ্যিালয়টির উপাচার্য এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পরস্পরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্তে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, লিডিং ইউনিভার্সিটি’র আর্কিটেকচার বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা জারিনা হোসেইন এবং সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাস এর বহিষ্কারাদেশ বাতিল ঘোষণাপূর্বক সকল সুযোগসুবিধাসহ বহিস্কারাদেশ সাক্ষরের তারিখ হতে স্বপদে পূর্নবহাল করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সেইসাথে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর কোন এখতিয়ারবলে তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তার কারনদর্শানো সহ ব্যাখ্য তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিশনে প্রেরণ করারও আদেশ দিয়েছে কমিশন।
সেই সাথে ইউনিভার্সিটি’র উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মওলাকে চুক্তি অনুযায়ী বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ইউজিসির পরিচালক ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে সকল বিভাগে আগামী ৩ মাসের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩৩(৩) ধারা মোতাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা নিশ্চিত করার জন্যও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আপত্তি ওঠায় গত আগস্টে সাদিকা জান্নাতসহ তিনজনকে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়।