মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা গতিশীল করতে জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দিন
মাদ্রাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকার স্থাপন করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড,মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।সরকারী ও বেসরকারী মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর অসং্খ্য ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিস্তার করছেন। ফলে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। প্রত্যেকটি মাদ্রাসা সার্বিক পরিচালনা ও দেখভাল করার জন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকেন একজন অধ্যক্ষ /সুপার।প্রশাসনিক কাজে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন অধ্যক্ষ পারেন শিক্ষা ব্যাবস্থা উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন হিসেবে গড়ে তুলতে।আলীয়া মাদ্রাসায় ১ম শ্রেণী থেকে কামিল(মাস্টার্স) পর্যন্ত পড়াশোনা হয়।।দাখিল মাদ্রাসা ১ম-দাখিল(১০ম শ্রেণী পর্যন্ত যার প্রধান সুপার(প্রধান শিক্ষক) ।সিনিয়র বা আলিম মাদ্রাসা ১ম-আলিম (এইচএসসি) যার প্রধান একজন অধ্যক্ষ। ফাজিল (ডিগ্রী) ও কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসায় একজন অধ্যক্ষ ও একজন উপাধ্যক্ষ নিয়োজিত থাকেন।
অন্যদিকে একটি দাখিল মাদ্রাসা ১জন সুপার(প্রধান শিক্ষক ) ও ১ জন সহঃ সুপার (সহকারী প্রধান)প্রশাসনিক কাজ পরিচালনায় থাকেন।
১০ বছর সহ মৌলভী বা সহকারী শিক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতা থাকলে সহ সুপার হতে পারেন ও সহ সুপার হিসেবে ৩বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে সুপার(প্রধান শিক্ষক) হতে পারেন।
আবার সহকারী অধ্যাপক /মুহাদ্দিস পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ মোট ১২ বছরের অভিজ্ঞ প্রার্থীরাই আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও ফাজিল /কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ হতে পারেন। অন্যদিকে আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ হিসেবে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ মোট ১৫ বছরের অভিজ্ঞরাই ফাজিল /কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।যা জেনারেল কলেজেও বিদ্যমান।
মাদ্রাসা শিক্ষা যোগউপযোগী করার লক্ষে সরকার মানবিক,বিজ্ঞান শাখা চালু করে। আরবি, হাদিস ছাড়াও বাংলা, ইংরেজি, গনিত, ICT,হিসাববিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয় পাঠদানের মাধ্যমে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। ফলে জেনারেল শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে উক্ত গুরুত্বপু্র্ন বিষয়গুলো পাঠদান করানো হয়।
জেনারেল বিষয়ে প্রভাষক/শিক্ষকগণ অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে স্কুল, কলেজ ও কারিগরী প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ /প্রধান শিক্ষক হতে পারলেও মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ বা সুপার পদে আবেদন করতে পারে না।তাই বিপুল সং্খ্যক প্রার্থী প্রশাসনিক কাজে দক্ষ হওয়া সত্তেও মাদ্রাসায় সে মেধা প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছে না।
প্রধান শর্ত কামিল পাস থাকায় জেনারেলরা বঞ্চিত।জেনারেল শিক্ষক ছাড়া মাদ্রাসা কখনো আধুনিকায়ন হতে পারে না।তাই কর্তাব্যক্তিদের উচিৎ নীতিমালা পরিবর্তন করে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
জেনারেল শিক্ষকরা সরকারী দায় দায়িত্ব, ট্রেনিং,নিয়মনীতি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন।যেকোন জাতীয় ডিউটি যেমন, নির্বাচন,পাবলিক পরিক্ষা ডিউটি, নিয়োগ পরিক্ষা ডিউটি,পরিক্ষক,নিরিক্ষন ও বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনে সর্বদা অগ্রসর থাকেন।
একজন কলেজ অধ্যক্ষ যেমন সববিষয়ে সমান পারদর্শী নয়, তেমন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও।কলেজের অধ্যক্ষ যদি বাংলা বা ইংরেজি শিক্ষক হয় তার পক্ষে ক হিসাববিজ্ঞান বা আইসিটি বিষয়ক ধারনা নাও থাকতে পারে।তবুও তিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম। তাহলে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ কেন কামিল বা আরবি ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে?মুলত অধ্যক্ষ পদে প্রশাসনিক দক্ষতা ও প্রভাষক পদে অভিজ্ঞতাই মুল বিষয়।
মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ/সুপার পদে শুধু কামিল গ্রহনযোগ্য হলে দক্ষ ও মেধাবী জেনারেল শিক্ষকরা মনোবল হারাবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্রছাত্রী কখনো মাদ্রাসায় চাকরি করতে চাইবে না।ফলে নতুন প্রজন্মরাও মাদ্রাসায় ভর্তি হতে আগ্রহ হারাবে যা কাম্য নয়। তাই দক্ষ জনশক্তি গড়তে মাদ্রাসায় জেনারেল শিক্ষকদের অধ্যক্ষ /সুপার পদে নিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।
মাদ্রাসায় কর্মরত জেনারেল শিক্ষকরা প্রধান হওয়ার সুযোগ না থাকায় জুনিয়র শিক্ষক বা প্রভাষক(আরবি) পরে চাকরিতে জয়েন করে সিনিয়র শিক্ষকদের ওভারটেক করে অধ্যক্ষ/সুপার হয়ে যাচ্ছেন। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশে মাঝেমধ্যে শিক্ষা বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি হয়,যা কাম্য নয়।
অনুপাত প্রথা ৫:২ অনুসারে প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে প্রমোশন (কোন রকম পদোন্নতি পরিক্ষা ছাড়া)। ফলে মাদ্রাসায় জেনারেল কোন শিক্ষক পদোন্নতি পেলে কিছু কিছু মাদ্রাসায় আরবি বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক কেউ নাও থাকতে পারে যা অধ্যক্ষ নিয়োগের পুর্ব শর্ত। তাই অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী সংকট দেখা দিতে পারে। তাই সকল স্তরে অনুপাত প্রথা বাতিল করে ৮ বছরে সকল প্রভাষকদের পদোন্নতি ব্যবস্থা করা কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষকদের প্রানের দাবী। অনুপাতের বেড়াজাল ও কামিল যোগ্যতাসহ আরবি, হাদিস, তাজবিদ প্রভৃতি শর্ত মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা দুর্বল ও নিম্নমুখী হতে পারে।
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3819335545544071"
data-ad-slot="1400761447">
নীতিমালা অনুসারে মাত্র অল্পসংখ্যক প্রার্থী (কামিল ব্যাকগ্রাউন্ড) অধ্যক্ষ/সুপার হয়।তাই প্রশাসনিক পদে অনেকেই ফিট না থাকা সত্তেও দায়িত্ব দিতে হয়।আধুনিক এই উন্নয়নশীল এই ডিজিটাল বাংলাদেশে এরকম চললে সরকারের মহতি উদ্যোগ ও লক্ষ্যে পৌছা অসম্ভব হতে পারে।যদি জেনারেল ও আরবি শিক্ষকদের একত্রিত সমন্বয়ে প্রতিযোগিতামুলক পরিক্ষার মাধ্যমে অধ্যক্ষ /সুপার নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয় তবেই দক্ষ,যোগ্য,মেধাবী,ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীরাই উক্ত পদে আসীন হবেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনায় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড,কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর,মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ,ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও আরবী বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা দক্ষতা ও সুনামের সহিত পরিচালনা করতে পারলে জেনারেল শিক্ষকরা অবশ্যই মাদ্রাসা পরিচালনায় সক্ষম হবেন। জেনারেলদের মাধ্যমেও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আরো একদাপ এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা।
সর্বোপরি, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, নীতিনির্ধারক ও কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়ন, গতিশীল ও ত্বরান্বিত করতে জেনারেল শিক্ষকদের অধ্যক্ষ /সুপার পদে আবেদনের সুযোগ দিবেন। মেধাবী শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী দের আগ্রহ বাড়াতে সমতা বিধানের লক্ষ্যে জেনারেল শিক্ষকদের সুযোগ প্রদানে বিনীত অনুরোধ করছি।উপরোক্ত বিষয়টি আমলে নিয়ে মুল্যায়ন করলে দেশ, জাতি তথা সর্বস্তরের জনগণ উপকৃত হবে।
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম,
প্রভাষক(ইংরেজি),
সমষপুর কলেজ,শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ
ও
সাংগঠনিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি।
মোবাইল 01782284536