অবসর কল্যাণ বোর্ড এক মৃত্যুপূরীর নাম!
বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ডের কার্যপরিধি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করতে চাই।
দীর্ঘ ৩৫-৪০ বছর শিক্ষকতা শেষ করে একজন শিক্ষক যখন অবসরে যান,তখন এমনিতেই কর্মহীন জীবন যেনো বিষাদময় হয়ে ওঠে।এর পর শুরু হয় নতুন এক জীবন যুদ্ধ যে যুদ্ধে জয় লাভ করা প্রায় অসম্ভব।নতুন চিন্তা ভাবনা শুরু হয় অবসর কল্যানের টাকা উত্তোলন নিয়ে।আর যদিও বা পাওয়া যায়, তাহলে সেই টাকায় কি পরিবারের অভাব, অনটন,দরিদ্রতা দূর হবে? নাকি তাতে পরিবারের মধ্যে নতুন কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে? ভাবনার নতুন দোলাচলে যেনো এক অথৈ সাগর যার শুধু মাত্র শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই।যত দিন গড়াতে থাকে ততই যেনো হৃদয় আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা বাড়তে থাকে!
অবসরের পরে একজন শিক্ষক অর্থ উত্তোলনের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে যান। কারণ এই অর্থ উত্তোলন শুধু কঠিনই নয় প্রায় অসম্ভবও বটে।একজন শিক্ষক যদি ৪/৫ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে থাকেন তাহলে সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি বছররের ৩/৪ টি এম,পি,ও কপি,,বেতন ভাতা উত্তোলনের কপি, সরকারী বেতন বিতরন রেজিস্টার্ড রেভিনিউ ষ্ট্যাম্প সম্বলিত আরো কত কি কাগজ পত্র তার ই-আত্মাও নাই। ফলে বছরের পর বছর শুধু কাগজ পত্র ঠিক করতেই লেগে যায়, আবার কারও কাগজ পত্র আর সারা জীবনেও সংশোধন হয় না। এভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে এক সময় তার শরীরের সমস্ত বল বুদ্ধি শেষ হয়ে যাবার যোগার হয়। তবু অবসর কল্যান নামক সোনার হরিণের দেখা পাওয়া যায় না।
ক্ষোভ আর হতাশাই তখন তার নিত্য সংগী হয়ে যায়।জীবন সায়াহৃে যখন একজন মানুষের এতো দু:খ বেদনায় জর্জিরিত হতে হয় তখন তার কর্মের প্রতি শুধুই অবহেলা আর গ্লানি জন্ম নেয়।তখন মনে হয় জীবনে কত পেশা বাদ দিয়ে কেনো শিক্ষকতা পেশায় এসেছিলাম, কেনো স্বপ্ন দেখেছিলাম শিক্ষিত জাতিগড়ার,হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে কেনো শিক্ষা দিয়েছিলাম, যারা আজ প্রশাসনিক বড় বড় আসনে বসে শিক্ষদের নিয়ে তামাসা দেখছেন!
আজ যদি এই অবসর কল্যান বোর্ডের জন্ম না হতো, এতো দৌড়াদৌড়ি কি করতে হতো, এতো কাগজ পত্রের কি কোনো প্রয়োজন ছিলো? আমি যদি আমার কর্তনের টাকা ব্যাংকে জমা রাখতাম আজ যাবার বেলায় শুধু মাত্র একটা চেকের পাতা দিয়ে টাকা গুলো তুলে নিয়ে নিজের ইচ্ছে মত পরিবার পরিজনের কাজে লাগাতে পারতাম! তা তো আজ আর হচ্ছে না।
এ রকম হাজার ভাবনা নিয়ে ভাবতে ভাবতে অবসর কল্যানের টাকা পাবার আশা বুকে নিয়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছেন এদেশের হাজারও অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক। যারা দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নিজেদেরকে বিসর্জন দিয়েছিলেন দেশ মাতৃকার কথা বিবেচনা করে। তাদের এই দু;খ দাড়দশা কি কোনো দিন শেষ হবে না? আর কত মৃত্যু হলে এ দেশের শিক্ষক সমাজের ভাবনার মৃত্যু হবে আজ জানতে বড্ড ইচ্ছে করে!!!!
পরিশেষে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিকট বিনীত আবেদন উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রেক্ষিতে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রানের দাবি আমাদের চাকুরী জাতীয়করণের ঘোষনা দিয়ে অনতিবিলম্বে সকল সমস্যার সমাধান করবেন বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস রেখে শেষ করছি।
লেখকঃ
মোহাম্মদ মোকাররম হোসেন (আপন)।
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ( নজরুল),
চট্টগ্রাম বিভাগ।