গরীব শিক্ষকের ঘাম ঝড়ানো টাকা থেকে ৪% কর্তন বন্ধ করুন
কল্যাণের নামে যা কেটে নিবে তা আমাকে দিবে না। তাহলে আমার টাকা দিয়ে কার কল্যাণ করা হবে? আমার ঘাম ঝড়ানো পয়সা কেটে নিবে অথচ আমাকে জিজ্ঞেস ককরবে না, এটাতো হতে পারে না। এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? একজন সাধারন দিন মজুরের পুরোমাসে যে আয়, তা একজন বেসরকারি শিক্ষকের মাসিক আয়ের চেয়ে অনেক বেশি। একজন সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল ১২৫০০। আজকাল যে কোন একজন এনজিও কর্মীর বেতনও নিঃসন্দেহে এর চেয়ে অনেক বেশি। শিক্ষকের সামান্য এ কয়টা টাকার প্রতি এত লোভ কেন?
পাকিস্তানীদের বৈষম্যমূলক আচরণের হাত থেকে বাঙ্গালীদের রক্ষা করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সংগ্রাম করেছেন এবং বাঙ্গালীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার ডাক দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও সেই বঙ্গবন্ধুর দেশে বেসরকারি শিক্ষকরা আজ চরম বৈষম্যের শিকার। স্বাধীনতার সুফল থেকে তারা হচ্ছে বঞ্চিত।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রায় ৯৫% বেসরকারি শিক্ষকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দেশব্যাপি সকল পাবলিক পরীক্ষা গুলোর সিংহভাগ দায়িত্ব পালন করেন বেসরকারি শিক্ষকগণ। পরীক্ষার ফলাফলেও এগিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। দেশের সকল স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে জীবনের ঝুকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন তারা। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। সরকারি ও বেসরকারিদের নিয়ম নীতি, দায়িত্ব কর্তব্য অনেকটাই এক বরং কোন কোন ক্ষেত্রে বেসরকারিদের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা একটু বেশীই থাকে। অথচ প্রাপ্তির বেলায় তাদের মধ্যে বৈষম্য আকাশ পাতাল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষা জাতীয়করণের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। তাইতো দেশ স্বাধীনের পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হওয়া সত্ত্বেও প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেছিলেন। এখনকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক শক্তিশালী। এখন যদি বঙ্গবন্ধু জিবীত থাকতেন হয়তো দেশের কোন শিক্ষা ব্যাবস্থা বেসরকারি থাকতো না।
জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হসিনা দেশের অবহেলিত ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। পরে সকল বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণের হিসাবটিও জানতে চেয়েছেন। আর এতেই জাতীয়করণের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বেসরকারি শিক্ষক সমাজ। তারা সরকারকে এটাও বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, বেসরকারি শিক্ষকদের চাকুরী জাতীয়করণ করলে সরকারের বাড়তি একটা খরচও হবেনা। বরং সরকার লাভবান হবেন। কারন সরকার তাদেরকে স্কেলের শতভাগ বেতন দেন। দুটি উৎসব ভাতা, নববর্ষ ভাতা, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট,অল্প করে হলেও বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতাও দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ জাতীয়করণর প্রায় দ্বার প্রান্তে। সরকারি করণে বাড়তি যে ব্যায়য় টুকু হওয়ার কথা তা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় দ্বারা নির্বাহ সম্ভব। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে জেনারেল ও রিজার্ভ ফান্ড। যাতে জমা আছে কোটি কোটি টাকা। রয়েছে স্হাবর সম্পত্তি। আরো আছে ছাত্র বেতনের কোটি কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের যদি আর একটু সদিচ্ছা থাকে তাহলে জাতীয়করণ বড় কঠিন কোনো কাজ নয়।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, যে মুহুর্তে দেশে ব্যাপী জাতীয়করণের আলোচনা তুঙ্গে। ঠিক সেই মুহুর্তে অবসর ও কল্যাণের নামে বেসরকারি শিক্ষকদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ৪% কেটে নেয়া হয়। শুধু তাই নয়, যখন শিক্ষক সংগঠন গুলো ৪% কর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে ঠিক তখনই অবসর ও কল্যাণ বোর্ডের সদস্য সচিবের জন্য বিশাল অংক ব্যায় করে গাড়ি কেনার খবরটি প্রচার করা হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিনা জানিনা, তবে এর দ্বারা শিক্ষক সমাজকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
গ্রাম্য প্রবাদ বাক্যটি মনে পড়ে গেলো- “খয়রাত লাগবে না কুত্তা খেদাও”। জাতীয়করণ চাওয়ায় দেয়া হলো ৪% কর্তন। অনেক হয়েছে। আর লাগবে না। আপাতত আমার ঘামঝড়ানো টাকা থেকে ৪% কেটে নেয়া বন্ধ করুন।
লেখকঃ
মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন