বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার রাতে অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া সমকালকে বলেন, ‘ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ অবস্থায় জারিন দিয়াকে সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের ৫০২ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি ভর্তি ছিলেন। সেখানে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে ঢাবির রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার বলেন, ‘বহিষ্কারের ক্ষোভ থেকে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে দিয়া। হাসপাতালের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর এখন তার শারীরিক অবস্থা ভালো। তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
জারিন দিয়াকে বহিষ্কারের বিষয়ে লিপি আক্তার বলেন, ‘ঐ দিন মধুর ক্যান্টিনে হামলায় দিয়াও আহত হয়েছে। ছাত্রলীগে পদ না পেয়ে ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে সেদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উপর তার ক্ষোভ থাকতেই পারে। তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে তার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমরা তার বহিষ্কার মানি না।’
এ বিষয়ে জারিন দিয়া বলেন, ‘ভালোবাসার সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে হয়তো অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি। আমি খুব সাধারণ একজন কর্মী। কারোর সাথে কোন শত্রুতা ছিল না কোনো দিন। একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে হয়তো আজ অনেক আলোচনা সমালোচনার মুখোমুখি পড়েছি। পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছি বলেই স্ট্যাটাসটা দেইনি। আসলে জমে থাকা কষ্টগুলো ভেতরে আর রাখতে পারিনি। সত্যি অনেক পরিশ্রম করেছিলাম।’
জানা যায়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয় জারিন দিয়াকে। এর তিন ঘণ্টা পর সোমবার রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগ সভাপতি রেওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর প্রতি কিছু প্রশ্ন রেখে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
নতুন কমিটিতে পদ না পাওয়ার এবং তারপরের কিছু ঘটনা উল্লেখ করে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে জারিন দিয়া লিখেছেন, ‘আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। জানি না কী করবো। আমি যদি মারা যাই শোভন-রাব্বানী ভাইদের কাছ থেকে প্রশ্নগুলির উত্তর নিয়ে আমাকে কলঙ্কমুক্ত করবেন পারলে।’
তিনি লিখেন, ‘গত ১৩ তারিখ পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার পর যখন দেখলাম আমার নামটি নেই, তখন ভাবলাম- হয়তো যোগ্য না। তাই হয়তো আমার নামটি দেয়নি। এক পর্যায়ে শোভন ভাইকে ফোন দিলাম। ভাইকে বললাম, ভাই আমাকে কেনো কমিটিতে রাখা হলো না? আমি শুনতে চেয়েছিলাম তিনি হয়তো বলবেন, আমি যোগ্য না। রাজনীতি করতে থাকো, পাবে একসময়। কিন্তু না। ভাই আমাকে বললেন; তোকে অনেক রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাব্বানীর জন্যে তোকে রাখতে পারিনি। রাব্বানীর তোর ওপর ব্যক্তিগত ক্ষোভ। আমাকে ভুল বুঝিস না। কথাটা শুনে কাঁদবো না হাসবো বুঝতে পারলাম না। তখন আমি শোভন ভাইকে বললাম ব্যক্তিগত ক্ষোভের সেই ঘটনাটা। আরও বললাম, কোনোদিন যদি আপার সামনে যেতে পারি ভাই, আমি আপাকে একটা বার বলতে চাই- আপা সম্মেলনের আগে রাব্বানী ভাই এর সাথে এই বিষয়টা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তখন ভাই আপনি কী উত্তর দেবেন? কোনো উত্তর দিতে পারেননি শোভন ভাই। রাব্বানী ভাইকে অনেক বার ফোন দিয়েছি। উনি ফোন ধরেননি। তাই সামাজিক মাধ্যমে ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে আমার সঙ্গে রাব্বানী ভাইয়ের ক্ষোভের ঘটনাটি উল্লেখ করি। যেটা ভাইরাল হয়ে যায়। আজ সেই স্ট্যাটাসটার জন্যে আমাকে ছাত্রলীগ থেকে তারা বহিষ্কার করে দিলেন? আমার দেশরত্নের কাছে একটা প্রশ্ন রেখে যেতে চাই; আমরা মেয়েরা আর কতটা অসম্মানিত হলে তাদের যোগ্য বলে মনে হবে? শোভন-রাব্বানী ভাই আপনাদের একটা কথা বলে যেতে চাই, ব্যক্তিগত ক্ষোভ না দেখিয়ে যারা সংগঠনের জন্যে কাজ করে তাদের মূল্যায়ন দিয়েন। আমি সেদিনের মারামারিতে যখন কোমরে আঘাত পেলাম, কই আপনারা তো আমার একটা খোঁজ নিলেন না! আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। জানি না কী করবো। আমি যদি মারা যাই শোভন-রাব্বানী ভাইদের কাছ থেকে উত্তরগুলি নিয়ে আমাকে কলঙ্কমুক্ত করবেন পারলে। রাজনীতি করতে এসে রাজনৈতিক নেতাদেরই দ্বারা এতটা অসম্মানিত হবো কোনোদিন ভাবতেও পারিনি।’
তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সমকালকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। ওইদিন (১৩ মে) মধুর ক্যান্টিনে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় তারও ভূমিকা ছিলো বলে তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে।’
ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে পদ না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে রাব্বানী বলেন, ‘তাকে (জারিন দিয়া) তো আমি চিনতামই না। সে কীভাবে গত কমিটিতে সদস্য ছিলো, তাও জানতাম না। একবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে একটি কমেন্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম সে ছাত্রলীগের সদস্য। তারপর আর কিছুই হয়নি। এখন পদ পাওয়া নিয়ে সেই বিষয়কে ইস্যু বানালে তো আর হবে না। যেখানে ভালোকরে তাকে চিনিই না, সেখানে ব্যক্তিগত ক্ষোভের তো কোনো প্রশ্নই আসে না। এর জন্য পদ না পাওয়ার যে বিষয়টি বলা হচ্ছে সেটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ মে সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে মারামারির ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে সোমবার তাকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। ওই ঘটনায় তিনি নিজেও আহত হয়েছিলেন। ‘ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধুর ক্যান্টিন ভর্তি মেয়ে লাগে’ উল্লেখ করে ফেসবুকে তার দেয়া একটি স্ট্যাটাস সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তিনি ওই স্ট্যোটাস দেয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।