বিজেপির জয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে ভয়ে পালাচ্ছে আতঙ্কিত মুসলিমরা

আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান,
প্রকাশিত: ০৪:৫৯ পিএম, ২৩ মে ২০১৯

ছবিঃ ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত
কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আবারো ক্ষমতায় আসায় ভারতের উত্তরপ্রদেশে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের আধিপত্য চরমে। তাদের নানাবিধ প্রভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন অনেক মুসলিম জনগোষ্ঠী।

উত্তর প্রদেশের নয়াবান গ্রামে মোট ৪ হাজার মানুষের মধ্যে ৪০০ জন মুসলিম। গত দুই বছরে তাদের মধ্যে প্রায় এক ডজন ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র। আরো অনেকে গ্রাম ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন।

তবে সামর্থের অভাবে পারছেন না বলে তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন। এর মধ্যে গত বছরের শেষে গরু নিয়ে সহিংসতার ক্ষত এখনো তাদের মধ্যে গদগদে। গত নভেম্বরে নয়াবানে গরু জবাইয়ের অভিযোগে সহিংসতা জড়ায় হিন্দুরা।

পুলিশ গরু জবাই বন্ধ করতে পারেনি, এমন অভিযোগে মহাসড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখায় তারা। সে সময় সংঘর্ষে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুইজন নিহত হয়েছিলেন। এরপর ওই ঘটনায় মামলা হয়, বিনা অপরাধে জেল খেটেছেন অনেক মুসলিম। ওই সংঘর্ষের জের এখনো রয়েছে বলে মনে করছেন মুসলিমরা।

২০১৭ সালে যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। পরের রমজানে মাদ্রাসাকেন্দ্রিক একটি মসজিদে আজান দেওয়া বন্ধ করে দেয় কট্টরপন্থি হিন্দুরা।

দীর্ঘ সময় ধরে চললেও আজান দেয়া বন্ধ করে দিতে হয় মুসলিমদের। মুসলিম বাসিন্দা আয়েশা বলেন, ‘এখন এখানে আমরা ধর্মীয় বিষয় প্রকাশ করতে পারি না। তারা (হিন্দুরা) যা ইচ্ছা তা করতে পারে।’

গরু জবাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ দিন জেল খেটেছেন ৩৮ বছর বয়সি শরফুদ্দিন সাইফি। যদিও পরে এর কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ। এখন হিন্দুরা তার কাপড়ের দোকান এড়িয়ে চলেন। বিক্রি কমা আর মামলার পেছনে টাকা খরচ হওয়ায় দোকানে মালামাল তুলতে পারছেন না সাইফি। ছেলেকে ভালো স্কুল থেকে সরিয়ে আনতে হয়েছে তাকে।

উত্তর প্রদেশের নয়াবান ছেড়ে দিল্লির নিকটবর্তী মাসুরিতে চলে গেছেন কাঠমিস্ত্রী জব্বার আলী। এক সময়ের এই সৌদি প্রবাসী সেখানে একটি বাড়ি কিনেছেন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘যদি হিন্দুরা অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত পুলিশকে হত্যা করতে পারে, তাহলে আমরা মুসলিমরা কোন ছাড়?’

রাজধানী নতুন দিল্লিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চলেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা, ২২ বছর বয়সি জুনাইদ। আগে হিন্দু প্রতিবেশীদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার কথা এখনো মনে পড়ে তার।

‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে খেলতাম- বিশেষ করে ক্রিকেট। আমি অনেক খেলেছি। কিন্তু গত একবছরে আমরা একসঙ্গে খেলিনি,’ রয়টার্সকে বলেন জুনাইদ।

হিন্দুত্ববাদের স্লোগান উচ্চকিত করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন নরেন্দ্র মোদি। এরপর ২০১৭ সালে রাজ্যের ক্ষমতায় আসেন হিন্দু পুরোহিত যোগী আদিত্যনাথ। আগে সম্প্রীতি থাকলেও এখন তাদের প্রভাবে এলাকার সম্প্রীতি একেবারেই নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন নয়াবানের মুসলিমরা।

‘মোদি আর যোগী সব শেষ করে দিয়েছে। তাদের প্রধান অ্যাজেন্ডাই হিন্দু-মুসলিম বিভক্তি,’ রয়টার্সকে বলেছেন নয়াবানের বাসিন্দা গুলফাম আলী। লোকসভা নির্বাচনের প্রাথমিক ফলে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ‘এগিয়ে’ রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতি আরো বাজে হতে পারে বলে শঙ্কায় নয়াবানের মুসলিমরা।

ঘরবাড়ি ছাড়ার অভিযোগ মুসলিমরা করলেও কোনো ধরনের আধিপত্যের কথা অস্বীকার করেছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগারওয়াল বলেন, ‘বিজেপির সময়ে কোনো দাঙ্গা হয়নি।

অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে হিন্দু-মুসলিমের বিষয় মেলানোটা ভুল হবে।’ বিরোধী দলগুলো সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অনেকের মনে এলাকা ছাড়ার প্রবণতা থাকলেও কোনো কোনো মুসলিম বলছেন লড়াই চালানোর কথা।

তাদের মতো একজন ৪২ বছর বয়সী আয়াস মোহাম্মদ। নিকটবর্তী শহরে এই টাইলসের দোকানি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি লড়াই চালিয়ে যাব। আমি ভীত নই। তবে, মোদি আবার ক্ষমতায় এলে অনেকের জন্য এখানে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’ ডিডব্লিউ


পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)