বৈষম্যের যাঁতাকলে চাপা পড়ে আছে বেশিক জীবন !!!
দেশ স্বাধীন হয়েছে সত্য কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ এখনো পেল না। জাতি গড়ার নিপুণ কারিগর আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। জাতির পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কোন পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন কিছুই হলো না। রয়েই গেল এনালগ যুগে। ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া পেল না। যা সত্যিই বেদনাদায়ক।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে। কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় দেখা দিচ্ছে চরম শিক্ষক অসন্তোষ। শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন শিক্ষক আন্দোলন যা শিক্ষা ব্যবস্থায় কারোর কাম্য হতে পারে না।
আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে এবং উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় দ্বিতীয়। দুঃখের বিষয় আজও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবনযাপনে কোন রুপ পরিবর্তন হলো না। আজও সেই আদিম যুগেই রয়ে গেল বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এখনো বে, শব্দটি থেকে মুক্তি পেল না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
বাড়ি ভাড়া ১০০ টাকা ছিল দীর্ঘদিন। এই বাড়ি ভাড়া বর্তমানে করা হয়েছে ১০০০ টাকা। যা বর্তমান সময়ে সত্যিই বেমানান। বর্তমান সময়ে সর্বনিম্ন বাড়ি ভাড়া গ্রামাঞ্চলে যেখানে ৩০০০ টাকা। তাহলে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাকি টাকা কোথায় পাবে? শহরাঞ্চলের বাড়ি ভাড়া ৬০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকার ও বেশি।
সেক্ষেত্রে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই সামান্য বেতনের টাকা দিয়ে জীবনযাপনই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারতেছে না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। অভাব অনটন সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। আর বাড়ি ভাড়া টাকা জোগাড় করবে কীভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা একটু ভাবুন সুধি সমাজ। চিকিৎসা ভাতা ১৫০ টাকা থেকে বর্তমানে করা হয়েছে ৫০০ টাকা। আর সরকারি যারা তারা পায় ১৫০০ টাকা। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই ৫০০ টাকায় কীভাবে চিকিৎসা করাবে?
যেখানে ডাক্তারদের সর্বনিম্ন ফি ৫০০ টাকা। বাকি টাকা কোথায় পাব? পেনশনের ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু অবসর ও কল্যাণ তহবিল নামে ১০০ মাসের বেতনের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা। নেই কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আর সরকারি চাকরি যারা করেন তারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাতা পায়। আর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তা থেকে ও বঞ্চিত।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনা অতীব জরুরি। নেই সন্তানের শিক্ষা ভাতা। নেই বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা।
অবসর ও কল্যাণ তহবিলের আয় বাড়ানোর নামে বর্তমানে মুল স্কেলের ১০ শতাংশ হারে কর্তন করা হয়। এই কর্তনের ও বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। সেই পূর্বের ন্যায় সুযোগ সুবিধা বহাল আছে। তাহলে এই কর্তন কেন ? কর্তন কর্তন খেলা বন্ধ করে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনুন মাননীয় কর্তৃপক্ষ।
আজীবন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা। নেই কোন বদলি প্রথা। যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থায় বদলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা থেকে ও বঞ্চিত বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক ঈদ বোনাস পায় মুল স্কেলের ২৫ শতাংশ। এই ঈদ এক যুগের ও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেল তবুও তার কোন পরিবর্তন হলো না । এই ঈদ বোনাসের পরিবর্তন চাই।
অন্য কোনো পেশায় এমন ঈদ বোনাস লক্ষণীয় নয়। সকল পেশার চাকরি জীবিরা পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস পায়। শুধু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তা থেকে ও বঞ্চিত। সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান চাই। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, বদলি, পেনশন সরকারি ন্যায় করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ এই যে, দেশের উন্নয়নের ধারায় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সংযুক্ত করে বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিলে শিক্ষক সমাজ আপনার প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে। আশা করি আপনি বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিবেন।
লেখক ও কলামিস্টঃ
মোঃ আবুল হোসেন
সিনিয়র যুগ্ম- মহাসচিব
বাশিস (নজরুল)
কেন্দ্রীয় কমিটি।