বাজেট : শিক্ষাখাতে ভালো কিছু আশা করা যাবে না
শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ এবার এই খাতেই। মোট বাজেটের অংশ হিসেবে ও টাকার অংশে– শিক্ষা খাতে দুইভাবেই এবার বরাদ্দ বেড়েছে বলে বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে। তবে এ বরাদ্দ অপর্যাপ্ত ও গতানুগতিক বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষাবিদ। শিক্ষা খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তারা।
গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাজেট উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা গেছে, শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে গতবারের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে। টাকার অংকে তা ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। গতবারের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় তা বেড়েছে ১৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ ভাগ অর্থ এবার এই খাতে ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতের সংশ্লিষ্ট চার মন্ত্রণালয়েরই বরাদ্দ বেড়েছে এবার। বেসরকারি শিক্ষকদের বহুল প্রত্যাশিত এমপিওভুক্তি খাতে ৯ বছর পর নতুন বরাদ্দ এবছর দেয়া হয়েছে। শিগগিরই নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল কে বলেন, ২০১৯-২০ সালের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত ৭-৮ বছর ধরে আমরা ১১ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শিক্ষা খাতে এটি নিম্নতম বাজেট। উন্নত শিক্ষার আমরা যে স্বপ্ন দেখছি এ বাজেট দিয়ে তা বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব? বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে বিনির্মাণ করতে হলে বিনিয়োগ ছাড়া কোনোভাবে তা সম্ভব নয়।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সরকার বলছে বাজেটের সংখ্যা কম হলেও টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে, তাই যদি হয় তবে প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যাও তো হু হু করে বাড়ছে, সেটিও তো বিবেচনা করতে হবে। ছাত্রছাত্রীর প্রতি বিনিয়োগ বাড়েনি। এবার নতুন দুটি বিষয় আনা হয়েছে। তার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা ও উচ্চশিক্ষায় গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এমপিওভুক্তি করলে যে শিক্ষার মান বাড়বে সেটি নিশ্চিত নয়, তবে এটি ব্যবস্থাপনায় ক্রটি থেকেই যাচ্ছে, কাদের এমপিওভুক্তি করা হবে সেটিও সুনির্দিষ্ট করা দরকার।
অন্যদিকে কিভাবে গবেষণা বাড়ানো হবে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়নি মন্তব্য করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, কিভাবে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানো হবে সেটিও স্পষ্ট করে উল্লেখ করা দরকার। বেসরকারি খাতের গবেষণা না বাড়ালে বাংলাদেশের গবেষণায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা সম্ভব নয়। এর জন্য রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দরকার। কৃষি খাতে যেমন বরাদ্দ বাড়িয়ে সফল হয়েছে। সিঙ্গাপুর, চীন ও শ্রীলংকা শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে অনেক উপরে উঠে গেছে। শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ না বাড়ালে বৈষম্য কমানোর সরকারের যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
রাশেদা কে চৌধুরী আরও বলেন, গতানুগতিক বাজেট দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, টেকসই লক্ষ্যমাত্রা তো দূরের কথা। শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যাবে না। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার রয়েছে। মোট বাজেটে ২০ শতাংশ না হলেও প্রতি বছর শিক্ষা খাতে কিছু কিছু করে আকার বাড়ানো দরকার, নতুবা আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সক্ষম হব না।
বাজেট বিষয়ে শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলেন, শিক্ষা খাতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে; যা বরাদ্দ দেয়া হয় তা সঠিকভাবে ব্যয় হয় না। শিক্ষাখাত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাই শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, সঠিক বন্টন করা জরুরি বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিকে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রশাসনের পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাই মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও তার সঠিকভাবে বণ্টন জরুরি বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ। সৌজন্যেঃ জাগো নিউজ২৪